সম্পাদকীয়
বাংলা সাহিত্যের শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক অমিয়ভূষণ মজুমদার। লেখকজীবনে তাঁর মতো ভাষাশিল্পী যথার্থ সমাদর লাভ করেননি। এই অভিমান তিনি বহন করেছেন আমৃত্যু। তাঁকে অবহেলা করে উত্তরবঙ্গের লেখক হিসেবে বারবার চিহ্নিত করা হয়েছে, যেন নগর কলকাতাকেন্দ্রিকতাই একজন লেখকের মাপকাঠি! অনেক তথাকথিত প্রান্তিক লেখকের মতো তিনিও মনে মনে ‘কলকাত্তাইয়া’ সংস্কৃতিচর্চা ও চর্চাকারকগণকে তাচ্ছিল্য করতেন। ফলে তাঁকে ক্রমাগত ‘উত্তরবঙ্গের সাহিত্যিক’ বিবেচনায় কোণঠাসা করা হয়েছে। আর আজীবন তাঁকে লিখতে হয়েছে লিটল ম্যাগাজিনে।
তিনি জন্মেছিলেন ১৯১৮ সালের ২২ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে, মাতুলালয়ে। তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন বাংলাদেশের পাবনার বর্ধিষ্ণু জমিদার। পাবনার পাকুড়িয়া গ্রামে তাঁদের আদি বাড়ি ছিল। তাঁদের আদি পদবি ছিল বাগচী। তৎকালীন নবাবের কাছে হিসাবরক্ষকের চাকরিসূত্রে মজুমদার উপাধি লাভ করেন তাঁর ঠাকুরদা।
কোচবিহারের জেঙ্কিন্স স্কুল থেকে দুটি লেটার নিয়ে ম্যাট্রিক, কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ এবং ১৯৩৯ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক পাস করেন।
কলেজে পড়াকালীন চাকরির চেষ্টা করতে থাকেন অমিয়ভূষণ। এরপর ১৯৪০ সালে ডাক বিভাগে চাকরি পেয়ে যান। চাকরিতে যোগদানের পরপরই তিনি ট্রেড ইউনিয়নের
সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।
প্রথম লেখা একাঙ্ক নাটক ‘দ্য গড অন মাউন্ট সিনাই’ ১৯৪৪ সালে মন্দিরা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৪৬ সালে পূর্বাশায় ‘প্রমীলার বিয়ে’ ও ১৯৪৭ সালে চতুরঙ্গ পত্রিকায় ‘নন্দরাণী’ গল্প দুটি প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁর বিশিষ্ট ভাষা ও গদ্যভঙ্গি পাঠক-সমালোচকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ১৯৫৩-৫৪ সালে প্রায় একই সঙ্গে পূর্বাশা পত্রিকায় তাঁর ‘গড় শ্রীখণ্ড’ এবং চতুরঙ্গ পত্রিকায় ‘নয়নতারা’ ধারাবাহিকভাবে ছাপা শুরু হয়েছিল। ৫০ বছরের লেখকজীবনে তাঁর ২৭টি উপন্যাস, ১১৫টি ছোটগল্প, ৫০টির বেশি প্রবন্ধ এবং ৬টি একাঙ্ক নাটক প্রকাশিত হয়েছে।
তাঁর রচিত আলোচিত উপন্যাসগুলো হলো—মধু সাধুখাঁ, ফ্রাইডে আইল্যান্ড অথবা নরমাংস ভক্ষণ এবং তাহার পর, রাজনগর, মহিষকুড়ার উপকথা ইত্যাদি।