ঈদে এবার রেকর্ডসংখ্যক (৮টি) সিনেমা মুক্তি পাওয়ায় সবার শঙ্কা ছিল, কোনো সিনেমা ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারবে কি না! তবে স্বস্তির খবর হলো, সে শঙ্কা অতটা সত্যি হয়নি। ঈদের দুই সপ্তাহের মাথায় এসে দেখা যাচ্ছে, অন্যবারের তুলনায় এবার বেশিসংখ্যক দর্শক এসেছেন হলে। প্রথম দিকে সব সিনেমার প্রায় প্রতিটি শো ছিল হাউসফুল। সিঙ্গেল স্ক্রিনে শাকিব খানের ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ দেখতে হলে ভিড় করেছেন দর্শক, অন্যদিকে সিনেপ্লেক্সগুলোতে বেশি চলেছে সজল-পূজা-রোশানের ‘জ্বীন’। গত ঈদের মতো এবারও বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি অনন্ত জলিল। তাঁর ‘কিল হিম’ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে বাপ্পি-মিতুর ‘শত্রু’, রোশান-ববির ‘পাপ’, ইয়াশ-ঐশীর ‘আদম’ ও জয়-অপুর ‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’। তুলনায় কিছুটা ভালো অবস্থানে আছে আদর-বুবলীর ‘লোকাল’।
সিঙ্গেল স্ক্রিনে শাকিবের আধিপত্য
ঈদে আটটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে ১৬০টির বেশি হলে। এর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক হল (১০০টি) দখলে নিয়েছে শাকিব খানের ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’। ফলে এবারের ঈদ যে শাকিবময় হবে, সেটা আগে থেকেই আঁচ করা গিয়েছিল। ঈদের দিন থেকে দেশের প্রতিটি সিঙ্গেল স্ক্রিনে শাকিবভক্তদের সমাগম চোখে পড়েছে। দ্বিতীয় সপ্তাহে তাই লিডারের দুটি হল বেড়েছে। গত বছরের ঈদে মুক্তি পাওয়া শাকিবের ‘গলুই’ নিয়ে দর্শকদের অতটা উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। তারও আগে শাকিবের আরও কয়েকটি সিনেমা চলে গিয়েছিল ফ্লপের তালিকায়। সে জায়গা থেকে লিডার দিয়ে নতুন করে হলে ফিরল শাকিবের রাজত্ব।
সিঙ্গেল স্ক্রিনে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ব্যবসা বেড়েছে—স্বীকার করে হল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জল বলেন, ‘এবার ঈদের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, নতুন করে ১০০-র ওপর হল খুলেছে। দর্শকদের হলে আসার পরিমাণও বেড়েছে। আমাদের পাওয়া তথ্য বলছে, আটটি সিনেমার মধ্যে কমপক্ষে একটি করে সিনেমা দেখেছেন যেকোনো দর্শক। ঈদের ব্যবসা নিয়ে মোটামুটিভাবে হলমালিকেরা সন্তুষ্ট।’
সিঙ্গেল স্ক্রিনে শাকিব দাপট দেখালেও সিনেপ্লেক্সে পিছিয়ে পড়েছেন ‘জ্বীন’-এর কাছে। প্রথম সপ্তাহে স্টার সিনেপ্লেক্সে লিডার পেয়েছিল ১০টি শো, সমানসংখ্যক শো ছিল ‘জ্বীন’-এর ঝুলিতেও। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহে লিডারের শো কমে নেমেছে ৫টিতে। আর জ্বীনের শো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯টিতে। স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ঈদে মুক্তি পাওয়া সব সিনেমা কমবেশি সাড়া পেয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে ‘জ্বীন’কে এগিয়ে রেখেছেন তিনি। মেসবাহ বলেন, ‘আমাদের এখানে হলিউডের হরর সিনেমাগুলোও ভালো সাড়া পায়। এই ধাঁচের সিনেমার প্রতি দর্শকের আকর্ষণ রয়েছে। বাংলা ভাষায় তো ভৌতিক সিনেমা সেভাবে হয় না। এ কারণে জ্বীন ঘিরে মানুষের আগ্রহ বেশি।’
যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসের সহকারী মার্কেটিং ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে এগিয়ে আছে জ্বীন। লিডার ও কিল হিম কাছাকাছি অবস্থানে আছে। এরপর আছে আদম ও লোকাল, এর মধ্যে লোকাল ভালো যাচ্ছে। জানুয়ারি থেকে বাংলা সিনেমার পরিস্থিতি অতটা ভালো ছিল না। ঈদ থেকে আমরা দেখছি বাংলা সিনেমা দেখতে অনেক দর্শক আসছেন। এবার ঈদের সিনেমার ব্যবসা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট।’
ঈদের সিনেমা মুক্তির দুই সপ্তাহ চলছে। তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে সিনেমাগুলোকে পড়তে হবে বড় প্রতিযোগিতার সামনে। ৫ মে দেশজুড়ে শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ মুক্তি পাওয়ার কথা। পাঠান এলে ঈদে মুক্তি পাওয়া বাংলা সিনেমাগুলোর ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সবাই। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার প্রযোজক-পরিচালকেরা কয়েক দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে অনুরোধ জানিয়েছেন, পাঠানের মুক্তি দুই সপ্তাহ পেছানোর জন্য। তবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্টের কর্ণধার অনন্য মামুন জানিয়েছেন, মুক্তি না পেছাতে পারলেও দেশীয় সিনেমার স্বার্থ বিবেচনায় আপাতত ২০ থেকে ২৫টি হলে পাঠান মুক্তি দেবেন তিনি।