বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে মানিকগঞ্জের ঘিওরে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকেই শুরু হওয়া বৃষ্টিতে ঘিওরের তিনটি নদীর পানি বাড়ার পাশাপাশি পাড়ের ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। তা ছাড়া বৃষ্টিতে চলতি রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
এদিকে সড়কে গণপরিবহন কম থাকায় পেশাজীবী ও স্কুল-কলেজগামীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। সড়কের পাশের ক্ষুদ্র ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতেই পারেননি। তবে বৃষ্টির মধ্যেই চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থী অনেককেই গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঘিওরের ধলেশ্বরী আর ইছামতী নদীপারের মানুষ। সেখানে আগে থেকেই অসময়ে নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে দুই পাড় ভাঙছিল। এই বৃষ্টিতে ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের চড় কুশুন্ডা এলাকা ধলেশ্বরীর ভাঙনে গতকাল বিকেল পর্যন্ত অর্ধকিলোমিটার পাকা রাস্তা ও আটটি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে বৃষ্টির পর মুড়িকাটা পেঁয়াজ, আলু, সবজি ও অন্য রবিশস্যের আবাদে ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এসব ফসলের জমিতে বৃষ্টির পানি আটকে রয়েছে। ফলে শস্যের চারা ও বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
ঘিওরসহ জেলার সাতটি উপজেলায় কৃষকেরা গোল আলু ও পেঁয়াজ আবাদের জন্য জমি তৈরি, সার প্রয়োগ শেষ করেছেন। অনেকেই বীজ রোপণ করেছেন। অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বৃষ্টিতে কৃষকেরা ঠিকমতো কাজ করতে পারেননি মাঠে। বৃষ্টি কয়েক দিন থাকলে ক্ষতি আরও বাড়বে বলে চিন্তিত তাঁরা।
রাধাকান্তপুর গ্রামের কৃষক মুন্নাফ মিয়া বলেন, ‘আজ আমার এক বিঘা জমিতে আলু বপনের কথা ছিল। আলুর বীজ সংগ্রহ, জমি তৈরি ও সার ছিটানো শেষ। বৃষ্টিতে সব ভেসে গেল।’
শোলধারা গ্রামের কৃষক জিন্নত আলী বলেন, ‘মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগানোর জন্য ইতিমধ্যে জমি তৈরি, সার প্রয়োগসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ। এ কাজের জন্য দিনভিত্তিক তিনজন শ্রমিক নিয়েছি। বৃষ্টির কারণে খেতে কাজ করতে পারিনি। শ্রমিকদের বসিয়ে পারিশ্রমিক দিতে হবে। এভাবে কয় দিন যে থাকে!’
ঘিওর পঞ্চরাস্তা স্টেশনে অস্থায়ী চা-পান দোকানদার শুকুর আলী বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে মানুষজন খুব একটা বাইরে নেই। সকাল থেকে বেচাকেনা বন্ধ। মাথার ওপর ছাতা টানিয়ে বসে আছি। ঠান্ডা বাতাসে থাকা যায় না। শরীরে কাঁপন ধরে।’
বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে একটি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে রেইনকোট নিয়ে বের হয়েছি। ঘিওর ও দৌলতপুর বাজারে এসেছিলাম কাজে। কাজ শেষে জেলা শহরে ফিরছি। টানা বৃষ্টি আর প্রচণ্ড দমকা বাতাসে এখন মোটরসাইকেল চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’
বানিয়াজুরী ইউপি চেয়ারম্যান এস আর আনসারী বিল্টু বলেন, গ্রামাঞ্চলে ইতিমধ্যে হালকা শীত পড়া শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বৃষ্টি আর নিম্নচাপের ফলে শীতের প্রভাব বেশি অনুভূত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে এ মুহূর্তে কৃষকদের পেঁয়াজ, আলু, সবজি চাষে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের মাঠকর্মীদের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আলু, পেঁয়াজ চাষের জমিতে পানি জমে গেলে পচন ধরার আশঙ্কা রয়েছে। তাই কোনোভাবেই যেন চাষের জমিতে পানি না জমে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কমপ্লেক্সের আসিফ আহসান বলেন, এই বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি-জ্বরের আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে শীতল বাতাসে শিশু ও বৃদ্ধদের সাবধানে রাখতে হবে।