ডুমুরিয়া উপজেলার ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ জন শিক্ষক থাকলেও ছাত্র মাত্র ১ জন। তা ছাড়া উপজেলার আরও ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জনের নিচে রয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার ২১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে নতুন করে জাতীয়করণ হয়েছে ১০৪টি; যেখানে ২২ হাজার ৬১৭ জন ছাত্রছাত্রী আছে। তবে নতুন জাতীয়করণ হওয়া ১৩টিসহ মোট ২১টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জনের নিচে। তার মধ্যে ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া অর্পণ সরকারই একমাত্র ছাত্র।
জানা গেছে, ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ডুমুরিয়া উপজেলার ১ নম্বর ধামালিয়া ইউনিয়নের ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ ছাত্রকে পড়াচ্ছেন ৩ জন শিক্ষক। আর বিডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষক পড়াচ্ছেন ৪৫ জন শিক্ষার্থীকে। ৬ নম্বর মাগুরাঘানা ইউনিয়ন কুড়েঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৪৫ জন।
৭ নম্বর শোভনা ইউনিয়ন পল্লিশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৪১ জন। খাররাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৪২ জন। পি কে বলাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৪৬ জন। ৮ নম্বর শরাফপুর ইউনিয়নের জালিয়াখালী চাঁদগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মাত্র ৪২ জন। ৯ নম্বর সাহস ইউনিয়ন লতাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
চরচরিয়া নারায়ণ চন্দ্র চন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক পড়াচ্ছেন ৪০ শিক্ষার্থীকে। ১০ নম্বর ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন খড়িবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ধানিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৩৭ জন। তালতলা কুশারহুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মাত্র ৩২ জন। বকুলতলা ধানিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের মাত্র ৪২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
এ ছাড়া লাহাইডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৩ জন, জাবড়া ওড়াবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৮ জন, ১২ নম্বর রংপুর ইউনিয়ন সাড়াভিটা নরেন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৫ জন, ১৪ নম্বর মাগুরখালি ইউনিয়ন কাড়াকাটা শুকুরমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৯ জন, বাগারদাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৩ জন, কৈপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৬ জন, লাঙ্গলমাড়া খাগড়াবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৬ জন এবং পূর্ব পাতিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ১ জন ছাত্র থাকার কথা স্বীকার করে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপ্না রানী বলেন, ২৯টি পরিবার নিয়ে ময়নাপুর গ্রাম। এই গ্রামে গত ৭ বছরে কোনো বাচ্চা জন্মেনি বলে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর এই সংকট।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিকদার আতিকুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থী জরিপের পর গত মার্চ মাসে ময়নাপুর স্কুলটি বন্ধের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে আবেদন করেছি। এখনো সিদ্ধান্ত আসেনি। খুলনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাওলানা সিরাজুদ্দোহা বলেন, ওই স্কুল বন্ধ করে সেখানকার শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে ডুমুরিয়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার মান ভালো হলে যত্রতত্র এত কিন্ডারগার্টেন গড়ে উঠত না বা সরকারি স্কুলে ছাত্রছাত্রীর ঘাটতি হতো না। আর যেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম সেখানে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।