২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর। আরব সাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ ‘জাহান মনি’। ১০০ দিন জিম্মি দশার পর জাহাজ ও তার ২৬ নাবিক মুক্তি পেয়েছিলেন। সেই জাহাজে ছিলেন নাবিক মোহাম্মদ ইদ্রিস। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, জিম্মি দশার একপর্যায়ে জলদস্যুদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। দস্যুরা মাছ ধরতে তাদের বড়শি সরবরাহ করেছিল। নিয়মিত খাবারের সরবরাহও নিশ্চিত করেছে তারা।
জাহাজ ‘জাহান মনি’ ছিনতাইয়ের ঘটনাটি এখন নতুন করে আবার আলোচনায় আসার কারণ বাংলাদেশি আরেকটি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এটি ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। আটকা পড়েছেন জাহাজটির ২৩ নাবিক। চরম উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে তাঁদের পরিবার। এই অবস্থার মধ্যেই জাহান মনির নাবিক মোহাম্মদ ইদ্রিসের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। জাহাজ ছিনতাইয়ের শুরু থেকে জিম্মি দশা শেষ হওয়া পর্যন্ত সবকিছু খুলে বলেছেন তিনি। ‘এমভি আবদুল্লাহ’ এবং ‘জাহান মনি’–দুটি জাহাজেরই মালিক প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং কোম্পানি।
মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘এমভি আবদুল্লাহ যে স্টাইলে ডাকাতেরা ক্যাপচার করেছে, ঠিক একই কায়দায় জাহান মনিও কব্জায় নিয়েছিল সোমালি ডাকাতেরা। ছোট ছোট বোট, মাঝারি সাইজের ফিশিং বোট দিয়ে ওরা আক্রমণ করে। জাহাজ ক্যাপচার করার পরে আমাদের ব্রিজে নিয়ে জমা করে ওরা (ডাকাতেরা)। ১০০ দিনের জিম্মি দশায় আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। পুরো সময় আমরা ব্রিজেই ছিলাম। ওরা আমাদের জাহাজকে সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে গিয়েছিল। আমাদের শুকনো খাবার ছিল পর্যাপ্ত। মাছ মাংসের সমস্যা হলেও এসআর শিপিং কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে তার ব্যবস্থা করেছে।’
নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘দিন যত যাবে তত ওদের (ডাকাত) সাথে নাবিকদের ভালো সম্পর্ক হবে। জিম্মির দুই মাস পর ওদের সঙ্গে আমাদেরও সম্পর্ক ভালো হয়ে যায়। এরপর আমরা জাহাজের ডেকে গিয়ে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছি। বড়শি ডাকাতেরাও দিয়েছে, আমাদের কাছেও ছিল। খাওয়ার জন্য টুনা মাছও দিয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘জাহান মনির ১০০ দিনের জিম্মি দশায় আমাদের মধ্যে কারও অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তাই ওষুধপত্রের প্রয়োজনও হয়নি।’
ডাকাতদের সঙ্গে কী ধরনের কথা হতো জানতে চাইলে মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘ওরা কথা বলত। কেমন আছ? তোমাদের দেশ কী রকম? পরিবারের কী অবস্থা? তবে তা আরবি ভাষায়।’