সিন্ডিকেটে আটকে আছে চট্টগ্রাম খাদ্য অধিদপ্তরের পরিবহন, অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিবহন ও বিভাগীয় সড়ক পরিবহন ঠিকাদারি। আট বছর ধরে জেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। তিন বছর ধরে বিভাগীয় সড়ক পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগও বন্ধ রয়েছে।
এত দিন অনিবার্য কারণ দেখিয়ে খাদ্য পরিবহন ঠিকাদারদের তিন মাস পরপর দশমবারের মতো মেয়াদ বাড়ান চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্যনিয়ন্ত্রক। তবে এবার মামলার ফাঁদে আটকে গেছে চট্টগ্রামের বিভাগীয় খাদ্য পরিবহন ঠিকাদারি।
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মেয়াদের প্রায় দুই বছর পর গত ৩০ জুন পরবর্তী মেয়াদের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু চলতি বছরের ২৬ জুলাই মেসার্স পদ্মা ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. সাইফুল্লাহ জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ দ্বিতীয় আদালত, ঢাকায় মামলা করলে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। এরপর ২৮ জুলাই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্যনিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলামের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে দরপত্র স্থগিতের কথা জানানো হয়।
এদিকে জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের আওতাধীন অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগ হচ্ছে না আট বছর ধরে। খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সর্বশেষ খাদ্য পরিবহনের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে ২৪ জন ঠিকাদার নিয়োগ করে জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক অফিস। এই ২৪ জন ঠিকাদার ‘বাই রোটেশনে’ খাদ্য পরিবহন করেন। ২০১৫ সালের জুনে এসব ঠিকাদারের কাজের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু এরপর নতুন ঠিকাদার নিয়োগ না দিয়ে তিন মাস পরপর বিদ্যমান ঠিকাদারদের কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক অদৃশ্য কারণে আট বছর ধরে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিচ্ছেন না।
বিভাগীয় সড়ক পরিবহন ঠিকাদার প্রতি দুই বছর পর দরপত্র আহ্বান করে নতুন পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার কথা। কিন্তু ২০২০ সালে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ঠিকাদারদের বারবার সময় বাড়িয়ে কাজ দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ তাঁদের মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে খাদ্য বিভাগ।
খাদ্য বিভাগ জানায়, খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের আওতাধীন অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার হিসেবে ৪৬৯টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে।
অনেক ঠিকাদারই নিয়োগের সময় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে তালিকাভুক্ত হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় পরিবহন না করে সরকারি চাল চুরি করে বাইরে বিক্রিতে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে। গত ২৮ জুন নিবন্ধিত খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স হারুন এন্টারপ্রাইজকে ট্রাকে ১৫ টন চাল রাঙামাটির সদর গুদামে পাঠানোর জন্য দেওয়া হয়। ওই চাল চুরি করে চাক্তাই আড়তে বিক্রির সময় পুলিশের হাতে আটক হয়। এ ছাড়া গত বছর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নোয়াখালীর চরবাটা গুদামে চাল পাঠানো হলে সংশ্লিষ্ট পরিবহন ঠিকাদার এসব চাল পাহাড়তলী বাজারে পাচারের সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি খাদ্যশস্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ৪৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় নগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার এক ঠিকানায়। অভিযোগ আছে, এসব বেনামি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে খাদ্যশস্য পরিবহনের কাজটিও নিয়ন্ত্রণ করছেন মূলত খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারাই।
খাদ্য বিভাগ জানায়, সরকারিভাবে দেশে আমদানি করা খাদ্যশস্যের বেশির ভাগই আসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এ ছাড়া দেওয়ানহাট ও হালিশহরের কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামে চাল এবং পতেঙ্গার সাইলোতেও মজুত থাকে বিপুল পরিমাণ গম। সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের চাল, গম এবং সরকারি খাদ্যবান্ধব প্রকল্পের খাদ্যসহায়তা চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার বিভিন্ন খাদ্যগুদামে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিয়োগ করা হয় এসব ঠিকাদার। এ জন্য দূরত্ব আর যোগাযোগব্যবস্থা বিবেচনা করে ঠিকাদারদের মাইলপ্রতি পরিবহন ভাড়া দেয় খাদ্য বিভাগ।
অভিযোগ আছে, নতুন কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের লাইসেন্স ইস্যুর উদ্যোগ নিচ্ছেন না খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
খাদ্য বিভাগের চট্টগ্রাম চলাচল ও সংরক্ষকের ডেপুটি নিয়ন্ত্রক সুনীল দত্ত বলেন, ঠিকাদারদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
জেলা সহকারী খাদ্যনিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শ্যামা প্রসাদ চাকমা বলেন, আইআরটিসি ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তবে মেয়াদ শেষের সাত বছর পার হয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।