মাসুদুর রহমান মাসুদ, ঝিকরগাছা (যশোর)
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জসিম উদ্দিন। গত বছর করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। বসে না থেকে চলে আসেন গ্রামের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বর্ণী গ্রামে। তিনি জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন লেবু চাষ।
এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে যায় জসিমের, সঙ্গে খোলে ভাগ্যও। ইতিমধ্যে চায়না-৩ জাতের বিচিহীন লেবুখেত তৈরির খরচ তুলে লাভের মুখ দেখেছেন।
সেই লাভের পর এখন ১১২ শতক (তিন বিঘার বেশি) জমিতে লেবুর বাগান তৈরি করেছেন। খেত থেকে প্রতি বিঘায় (৩৩ শতক) অন্তত লাখ টাকা লাভের আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এ শিক্ষার্থী।
জসিম উদ্দিন এবার স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দিয়েছেন। তিনি কৃষি কাজের পাশাপাশি পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে গবেষণায় যুক্ত রয়েছেন।
গত রোববার সরেজমিন দেখা যায়, জসিম উদ্দিনের খেতে প্রচুর পরিমাণ লেবু ঝুলছে। এত পরিমাণ লেবু ঝুলছে যে গাছ সোজা রাখতে ঠেকনা দিতে হয়েছে। গাছের প্রতিটি ডগায় ঝুলছে লেবু।
আকারে অনেক বড় এবং রস বেশি থাকায় বাজারে এ লেবুর চাহিদাও অনেক। বিচিহীন এ লেবু বারো মাস ফলন দেয়। এ জন্য অসময়ে বেশি দামে বিক্রি করা যায়।
কৃষক উদ্যোক্তা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মহামারি করোনার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে বাড়িতে আসি। তখন বসে না থেকে পাশের রঘুনাথনগর মাঠে ১২ শতক জমি বর্গা নিয়ে চায়না-৩ জাতের ৭০টি লেবুর কলম রোপণ করি।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এসব কলম রোপণ, খেতে সেচ দেওয়া, সার প্রয়োগ, নিড়ানি, কীটনাশক দেওয়া বর্গার টাকাসহ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। ৬ মাস পর গাছ থেকে লেবু ওঠানো শুরু হয়। প্রথম বছরে আমি ৪৮ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করতে পারি।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে আরও ১০০ শতক জমি বর্গা নিয়ে লেবুর চাষ করছি। আশা করছি, আগামী মৌসুমে খরচ বাদে এসব জমি থেকে বছরে অন্তত তিন লাখ টাকার লেবু ও কলম বিক্রি করতে পারব।’
জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে যে পেশার সঙ্গে যুক্ত হই না কেন, আমি সারা জীবন কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে থাকতে চাই।’
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ‘করোনাকালে ঘরে বসে না থেকে কৃষিকাজ বেছে নেওয়া শিক্ষিত ছেলেদের সাধুবাদ জানাই। আমাদের কৃষিতে জসিমের মতো শিক্ষিত যুবকেরা যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে দেশ সমৃদ্ধ হবে।’