দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার জগতি দেশের সর্বপ্রথম রেলস্টেশন। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কলকাতার রানাঘাট থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ চালু হয়। রেলপথ ও জগতি স্টেশন স্থাপনের পর দেশে শুরু হয় রেলের যাত্রা। প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এটি এখন জীর্ণদশা। অবহেলায় ঐতিহ্য হারাচ্ছে দেশের প্রথম স্টেশনটি।
তবে সংস্কার করে আগের রূপে ফিরিয়ে আনার দাবি জনসাধারণের। কিন্তু রেল বিভাগ বলছে, ঐতিহ্য ছাড়া বর্তমানে এটির প্রয়োজনীয়তা নেই বললেই চলে।
জানা গেছে, দেশের রেল যোগাযোগের শুরুটা হয় কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশনের মাধ্যমে। সেটাও আজ থেকে প্রায় ১৬১ বছর আগে। কলকাতার রানাঘাট থেকে প্রতিদিন যাত্রী ও মালপত্রবোঝাই ট্রেন আসত এ স্টেশনে। সে সময় হাঁকডাকে মুখর থাকত এটি। পরবর্তী সময়ে ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারিতে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত আরও ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ সম্প্রসারণসহ পর্যায়ক্রমে দেশজুড়ে রেলওয়ের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নান্দনিক দোতলা ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনা কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেড় শ বছরের বেশি পুরোনো স্টেশনটি একসময় রমরমা ও সারা দিন হাঁকডাক থাকলেও এখন নিষ্প্রাণ। অফিশিয়ালি কোনো ট্রেন থামে না। তাই ঘণ্টা বাজে না, বিক্রি হয় না টিকিটি। সে সময়কার ঘণ্টাটি এখনো ঝোলানো স্টেশনমাস্টারের কক্ষের সামনে। বন্ধ হয়ে পড়ে আছে কক্ষটি। তবে মাঝেমধ্যে খোলা হয়। গেটকিপার সাজ্জাদ হোসেন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর জন্য তিনি সেটি খোলেন।
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘অফিশিয়ালি কোনো ট্রেন থামে না। তবে একটি লোকাল ট্রেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে পোড়াদহ জংশন পর্যন্ত আসা-যাওয়া করে। আর খুলনা থেকে গোয়ালন্দগামী একটি মেইল ট্রেন সকালে এসে বিকেলে ছেড়ে যায়। কয়েক মিনিটের জন্য থামে এ দুটি ট্রেন। টেলিফোন লাইন সচল না থাকায় গেটম্যানের কাজের পাশাপাশি মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করি ট্রেনের পরিচালকের সঙ্গে। এভাবে আমি কাজ করছি।’
রেলওয়ে বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলীয় পাকশী কার্যালয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘কালের বিবর্তনে জাগতির প্রয়োজন এখন নেই বললেই চলে।’