‘তারা বলে, গোলরক্ষকেরা যে পথে হেঁটে যান, সে পথে ঘাস ওঠে না’, কথাটি বিখ্যাত উরুগুইয়ান লেখক এদোয়ার্দো গালেয়ানোর বই থেকে নেওয়া। ১৯৯৫ সালে প্রথম প্রকাশিত ‘ফুটবল ইন সান অ্যান্ড শ্যাডো’ বইয়ে উদ্ধৃতি দেওয়ার মতো এমন অসংখ্য লাইন লিখে রেখে গেছেন গালেয়ানো।
প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ক্রীড়া সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে বইটি। ছোট ছোট অংশে ভাগ করে লেখা বইটিতে কবিতার মতো করে ফুটবলের ইতিহাস তুলে ধরেছেন গালেয়ানো। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বইটিকে ক্রীড়া সাহিত্যের ‘নিঃসঙ্গতার এক শ বছর’ (নোবেল বিজয়ী কিংবদন্তি সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের বিখ্যাত উপন্যাস) বলেও মন্তব্য করেছে।
বইয়ের প্রথম অংশের নাম ‘ফুটবল’। যার শুরুতেই গালেয়ানো লিখেছেন, ‘সকারের (ফুটবল) ইতিহাস হচ্ছে সৌন্দর্য থেকে দায়িত্বের দিকে যাত্রা।’ এরপর তিনি লিখেছেন কীভাবে ফুটবল সাধারণ বিনোদন থেকে শিল্পে পরিণত হয়ে উঠছে সেই গল্প। ‘দ্য প্লেয়ার’ অংশে কাব্যিক ঢংয়ে তুলে ধরা হয়েছে একজন খেলোয়াড়ের কথা। সাধারণ একজন মানুষ থেকে যিনি হয়ে উঠছেন জনতার নায়ক ও বিক্রয়যোগ্য পণ্য হয়ে উঠছেন সেসব। ঠিক যেভাবে বোকা জুনিয়র্স থেকে নেপলসের পথ পাড়ি দিতে গিয়ে দিয়েগো হয়ে ওঠেন ‘কিং ডিয়েগো ম্যারাডোনা।’
গোলের কথা লিখতে গিয়ে গালেয়ানো আমাদের জানাচ্ছেন, ‘অর্ধ শতাব্দী আগেও ০-০ অবস্থায় ম্যাচ শেষ হওয়ার কথা ভাবাই যেত না, যেখানে দুইটা হা করা মুখ বারবার হাই তুলছে। এখন এগারোটা খেলোয়াড় পুরো ম্যাচজুড়ে ক্রসবার ধরে আঁকড়ে ধরে প্রাণান্ত চেষ্টা চালায় গোল আটকানোর। এসবে তাদের আর গোল করার কথা মনেই থাকে না।’
এই বইয়ে তিনি শুধু ফুটবলের কাব্যিক গল্প শুনিয়েই থামেননি, এখানে তিনি লিখেছেন ফুটবলের রাজনীতি নিয়েও। কীভাবে বিভিন্ন সময় শাসক গোষ্ঠী ফুটবলকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করেছেন তাও তুলে ধরেছেন লেখক।
এ ছাড়া ইতিহাসের পথ পরিক্রমায় অর্থনীতি, ব্যক্তি চরিত্র ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় কীভাবে ফুটবলকে আজকের অবস্থায় নিয়ে এসেছে সেটিও নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন গালেয়ানো।