মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে স্ত্রীকে খুন করে জেল হাজতে রয়েছেন স্বামী। ১০ মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে তাঁদের ৩ শিশু সন্তান। মায়ের মমতা থেকে বঞ্চিত ৩ শিশুর কাছে এখন বাবা থেকেও নেই। ৬৫ বছরের বৃদ্ধ দাদার কাজ পাওয়ার ওপর নির্ভর করে তাদের এক বেলা খাবার জুটবে কি না। কিন্তু ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না বলে কেউ তাঁকে কাজও দিতে চান না। এ কারণে প্রতিদিন তাদের খাবার জোটে না।
জানা যায়, শ্রীনগর উপজেলার বানিয়াবাড়ি বাঘাডাঙ্গা এলাকার ভ্যানচালক অহিদুল মুন্সী জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য ২০২১ সালের ২ জুন গভীর রাতে তাঁর স্ত্রী পারভীন বেগমকে কৌশলে বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে আড়িয়ল বিলে নিয়ে যান। সেখানে রাতে স্ত্রীকে কাঁচি দিয়ে জবাই করে হত্যা করেন। লাশ গুম করার জন্য বিলের একটি পুকুরে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখেন। পরে অহিদুল মুন্সী প্রতিবেশীদের দায়ী করে অপহরণ নাটক সাজান।
পরদিন সকালে শ্রীনগর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পারভীন বেগমের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশ অহিদুল মুন্সীকে আটক করে। তিনি মুন্সিগঞ্জ আদালতে তাঁর স্ত্রীকে হত্যা ও নেপথ্যের কারণ বর্ণনা করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ ঘটনায় শ্রীনগর থানা-পুলিশ অহিদুল মুন্সীকে আসামি করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগপত্র দেয়।
জানা যায়, অহিদুল মুন্সী ও পারভীন বেগম দম্পতির সম্পা (১৭), মিম (৯), জান্নাত (৫) নামে ৩ কন্যা ও ইয়াসিন (১৩) নামে ১ পুত্রসন্তান রয়েছে। পারভীন বেগমের খুনের ৮ দিন আগে ভাগ্যকুল মান্দ্রা এলাকায় বড় মেয়ে সম্পার বিয়ে হয়। অর্থাভাবে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ইয়াসিন মুন্সীর লেখাপাড়া বন্ধ হয়ে গেছে গত বছরেই। এখন দাদা শাহ আলম মুন্সীর কাজে মাঝে মধ্যে সাহায্য করে। ৯ বছরের মিমের কাঁধে ঘরের কাজের দায়িত্ব। ছোট জান্নাতের বোঝার বয়স হয়নি।
শাহ আলম মুন্সীর কাজ করার অক্ষমতা, ইয়াসিনের লেখাপড়া বন্ধ, মিমের কাঁধে সংসারের বোঝা, অবুঝ জান্নাতের চঞ্চলতাকে ছাপিয়ে ক্ষুধার জ্বালা তাদের প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফেরে। যেকোনোভাবে ক্ষুধার জ্বালা মিটলেই এখন তাঁরা খুশি।
দাদা শাহ আলম মুন্সী আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের থেকে ভালো অবস্থান আছেন এমন অনেকেই সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেলেও আমরা এখনো কোনো সুবিধা পাইনি।’
শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণব কুমার ঘোষ বলেন, তাদের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে। সরকারের যেসব সুবিধার আওতায় আনা যায় তাদের খুব শিগগিরই সে সুবিধা দেওয়া হবে।