প্রশ্ন: গত সাত বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে একজন ভালো অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার পথে কতটা এগোলেন?
মেহেদী হাসান মিরাজ: বোলিং তো আলহামদুলিল্লাহ হচ্ছে। ব্যাটিংয়ে ভালো করলে সুযোগ বেশি থাকে। আমার ভাবনাটা ওটাই, ব্যাটিংয়ে আরও উন্নতি করব, আরও ভালো করব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে খেলতে একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। স্কিলের কিছু জায়গায় যদি আরও উন্নতি করতে পারি, আরও ভালো হবে।
প্রশ্ন: আরও ওপরে ব্যাটিং করতে চান, একাধিকবার বলেছেন। কিন্তু বর্তমানে দলের যে সমন্বয়, তাতে এ চাওয়া পূরণে আপনাকে যথেষ্ট অপেক্ষাই করতে হবে।
মিরাজ: যে ছয়-সাত বছর জাতীয় দলে খেলছি, আমি ৮ নম্বর পজিশনেই সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং করেছি। এখন ম্যানেজমেন্ট আমাকে সাত নম্বরে ব্যাটিং করানোর চিন্তা করছে। কোচ হাথুরুসিংহেও বলেন সাতে ব্যাটিং করার। এত দিনে এক ধাপ এগিয়েছি। একবারে তো দুম করে দুই-তিন ধাপ এগোতে পারব না। আমার মনে হয় পাঁচ-ছয়; বিশেষ করে ছয়ে ভালো ভূমিকা রাখতে পারব। ওখানে এমন পরিস্থিতি আসে, দল চাপে থাকতে পারে আবার ভালো অবস্থানেও থাকতে পারে। ওই জায়গায় যদি খেলতে পারি, মনে হয় ভালো করতে পারব।
প্রশ্ন: দেশে টানা কয়েকটি সিরিজে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ। এবার ইংল্যান্ড সফর, সামনে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ—২০২৩ সালের বাকি সময়টা স্মরণীয় করে রাখতে কতটা আত্মবিশ্বাসী?
মিরাজ: বাংলাদেশ দল বিশ্বের অন্যতম অভিজ্ঞ দল (ওয়ানডেতে)। যারা ভালো খেলছি যেমন লিটন, তাসকিন, মোস্তাফিজ, শান্ত, আমি—সবাই আমরা অনেক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি। নতুনদের মধ্যে হৃদয়, জাকির, হাসান এসেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দল এখন ভালো একটা প্যাকেজ। এটার কারণে আমরা আশা করতে পারি। বিশ্বকাপে আমরা ভালো একটা প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আমাদের পরিকল্পনা ওভাবেই করা হচ্ছে। এবার সিলেটে যেমন ক্যাম্প করতে যাচ্ছি। বিশ্বকাপের আগেও ক্যাম্প হবে।
প্রশ্ন: নির্দিষ্টভাবে ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার আশা বা স্বপ্ন কী?
মিরাজ: প্রথম আশা বা স্বপ্ন সেমিফাইনালে খেলব। সেমিফাইনালে খেললে সুযোগ আসবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। সেরা চার দলের লড়াইয়ে একটা জিতলেই ফাইনাল। আরেক ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। তার মানে সেমিফাইনালে উঠলেই অনেক এগিয়ে যাওয়া। ওখানে দুটি ম্যাচ জিতলেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন! আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, সেরা চারে থাকতে পারি কি না। আশা করি, এ চ্যালেঞ্জে উতরে যাব।
প্রশ্ন: বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নেতৃত্বগুণে যেভাবে মুগ্ধ করেছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটি প্রমাণের এখনো বাকি। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন?
মিরাজ: (হেসে) আসলে নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের বিষয়টা আমার নয়; ক্রিকেট বোর্ডের। তবে শুধু আমার নয়; যারা খেলে, সবার স্বপ্ন থাকে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার। কখনো যদি সুযোগ পাই, আমার লক্ষ্য, বাংলাদেশকে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়া; ভালো একটা শিরোপা জেতা। যেমন এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ জেতা।
প্রশ্ন: বিসিবি যদি আপনাকে কখনো প্রস্তাব দেয়, আপনার পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি থাকবে না, তাই তো?
মিরাজ: এখানে সময়ের ব্যাপারও আছে। এমন সময়ে প্রস্তাব এল, যেটা আমার জন্য উপযুক্ত নয়, আমি নেব না। যদি সময়টা ভালো থাকে, এটা আসলে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। তবে এটা নিয়ে এখন চিন্তা করছি না। সামনে বিশ্বকাপ। আরও পরিপূর্ণ হই। যেহেতু নানা পর্যায়ে অধিনায়কত্ব করেছি, সুযোগ তো শেষ হয়ে যাচ্ছে না। তবে এটা আরও পরের বিষয়।
প্রশ্ন: আপনার চোখে বাংলাদেশ দলের বর্তমান দুই অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবালের মধ্যে মূল পার্থক্য কোথায়?
মিরাজ: কোনো মন্তব্য নেই (হাসি)। এ বিষয়ে যত প্রশ্নই করেন, কোনো মন্তব্য নেই।
মিরাজের চোখে নাঈম
‘ও এখনো ভালো। ভালোও করছে। ম্যানেজমেন্ট যদি অপশন খোঁজে, আমার ব্যাটিংটা আল্লাহর রহমতে ভালো হচ্ছে। একটা জায়গায় পড়ে থাকা যায় না। এখন শুধু বোলার হিসেবে খেলি না, ব্যাটিংয়েও অবদান রাখি। এটা আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট। নাঈমও (দলে) ফিরবে আশা করি। টেস্টে যদি আমি আরও ওপরে ব্যাটিং করি, তখন সে জেনুইন বোলার হিসেবে খেলবে।’
নাঈমের চোখে মিরাজ
‘‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত বছর চট্টগ্রাম টেস্টে ৬ উইকেট পাওয়ার পর চোটে পড়েছিলাম। পরে ‘এ’ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ভালো খেলেছিলাম। তবে জাতীয় দলে এর মধ্যে আর ফেরা হয়নি। মিরাজ ভাই অনেক ভালো ব্যাটিং করছেন। আমি ব্যাটিংয়ে এখনো নিজেকে প্রমাণ করতে পারিনি। এখন আমি বোলিং-ব্যাটিং দুটোতেই উন্নতি করার চেষ্টা করছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা বিরতির পর এসেই ভালো করা কঠিন। আমি অবশ্য যতটুকু সুযোগ পেয়েছি, এভাবেই পারফর্ম করেছি।’’