অনিক শিকদার, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)
সমতল ভূমিতে কমলা চাষ করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দুই ভাই। কমলার চাষ যে শুধু পাহাড়ি অঞ্চলেই হয় এমন ধারণা পাল্টে দিয়ে এখন সমতল ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে কমলার চাষ করে সফল হয়েছেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নবাবপুর ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামের দুই সহোদর স্কুলশিক্ষক আব্দুস সালাম ও ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুর রউফ। শখের বশে করা কমলার বাগান এখন বাণিজ্যিক রূপ নিতে যাচ্ছে।
জানা যায়, শখের বশে প্রথমে তাঁরা কমলার চাষ শুরু করেন। পরে বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষের চিন্তা করেন। ২০১৫ সালের শেষ দিকে এক একর জমির ওপর ১০১টি ম্যারিন্ডা জাতের কমলার চারা রোপণ করেন। ২০২০ সালে তাঁদের বাগানে প্রথম প্রতিটি গাছে প্রায় ৫০ কেজি করে কমলা ধরে। কমলার স্বাদ যেমন ভালো ছিল, আকারেও তেমন বড় ছিল।
চলতি বছরেও তাঁদের বাগানে প্রচুর কমলা ধরেছে। তবে সঠিক পরিচর্যা না হওয়ার কারণে এ বছর কমলা ধরার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে এবারের কমলার স্বাদ গত বছরের চেয়েও বেশি মিষ্টি।
সরেজমিন স্বপ্নচূড়া নার্সারি অ্যান্ড টুরিজমে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি কমলা গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে রঙিন কমলা। কমলার বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। রঙিন কমলার সঙ্গে আবার কেউ কেউ সেলফি তুলছেন। স্থানীয় কৃষকেরা এই বাগান দেখে কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। বাগান করার জন্য জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষকেরা এখান থেকে কমলার চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
কালুখালী থেকে আসা কৃষক কামাল হোসেন বলেন, এখানে কমলার বাগান আছে বলে জানতে পেরে দেখতে এসেছেন। কমলার বাগান দেখে তিনিও এমন একটি কমলার এমন বাগান করার ইচ্ছা পোষণ করেন। এখান থেকেই চারা কিনে নিয়ে যাবেন এবং এঁদের পরামর্শ অনুযায়ী বাগানের পরিচর্যা করবেন।
দর্শনার্থী জিনাত আরা বলেন, গত বছর এখানে এসে কমলা দেখতে পাননি। শেষের দিকে এসেছিলেন। তাই এবার শুরুতেই সন্তানদের নিয়ে চলে এসেছেন। থোকায় থোকায় কমলা দেখে ওরা খুবই আনন্দিত হয়েছে। বেশ মজাও পাচ্ছে। নিজ হাতে কমলা ছিঁড়ে খেয়ে দেখেছেন। সমতল ভূমির কমলা হিসেবে বেশ সুস্বাদু।
কমলা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানমালিকের ভাগনে জাহিদুল ইসলাম বাগান পরিচর্যা করছেন। তিনি বলেন, স্বপ্নচূড়া নার্সারি অ্যান্ড এগ্রো টুরিজমে শখের বশে কমলা চাষ শুরু করলেও গত বছর ব্যাপক লাভ হওয়ায় তাঁরা এবার বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ করছেন। পাহাড়ি ভূমির পাশাপাশি সমতল ভূমিতে কমলা চাষ করা সম্ভব। এই কমলা চাষ করে যেকোনো কৃষক সফল হতে পারবে বলে আশা করেন তিনি।
বাগানের মালিক স্কুলশিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, প্রথমে শখের বশে কমলার চারা রোপণ করেন। পরে সফলতা পাওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন। এই অঞ্চলে ভালো জাতের কমলার চারা ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছে আছে তাঁর। সেভাবেই কাজ করছেন। তাঁর বাগানে উন্নত জাতের বিভিন্ন ফল ও ফুলের চারা পাওয়া যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাসিবুল হাসান বলেন, বালিয়াকান্দির মতো জায়গায় কমলা চাষ এই অঞ্চলের কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করবে। কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে উপজেলার অন্যান্য জমিতে কমলা চাষ করা যায় কি না আলোচনা করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে ফল চাষে বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে। আরও অগ্রগতির জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্যাপক কাজ করছে। ইতিমধ্যেই বালিয়াকান্দির দুই ভাই কমলা চাষে সফল হয়েছেন এবং তাঁদের দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকেরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এ বিষয়ে তাঁরা সারাক্ষণই বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।