জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
টানা শৈত্যপ্রবাহে নীলফামারীর সৈয়দপুরে শুঁটকি আড়তে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। ফলে লোকসানে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে পুঁজি হারিয়ে ঋণ পরিশোধের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
জানা যায়, সৈয়দপুরের নিয়ামতপুর শুঁটকি মাছের আড়তে স্বাভাবিক সময়ে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা মিলে প্রতিদিন ১৫-১৬ হাজার লোকের সমাগম ঘটতো। প্রতিদিন ৮০ লাখ থেকে কোটি টাকার শুঁটকি মাছ বেচাকেনা হতো। করোনার পর গত ৫ দিনের টানা শৈত্যপ্রবাহে আড়তের ব্যবসায়ীরা পড়েছেন লোকসানের মুখে। শীতের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকার ও ক্রেতারা আড়তে না আসায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিক্রি না হওয়ায় সামুদ্রিক মাছের শুটকি বিবর্ণ ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত দুই সপ্তাহ থেকে ক্রেতাদের ভিড় কমেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, আড়তে শুঁটকি মাছ আসে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও পাবনা থেকে। এর পাশাপাশি ভারত থেকেও শুঁটকি মাছ আসে হিলি ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। সামুদ্রিক ও মিঠা পানির বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি মাছও বিক্রি হয় আড়তে।
আড়তের লিংকন এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক রোস্তম আলী জানান, ’গত বুধবার সারা দিন মাত্র ৩ হাজার টাকার শুটকি বিক্রি হয়েছে। যা আগে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লাখ টাকার শুটকি বিক্রি হতো। শীতকালে ব্যবসা কম হয়; কিন্তু এমন ব্যবসায়িক ধস দীর্ঘ ১০ বছরেও হয়নি। তাছাড়া প্রতি কেজি শুটকিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা কমে গেছে।’
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে আসা শুটকি ব্যবসায়ী আজাহার আলী জানান, ’প্রচন্ড শীতে ক্রেতারা বাড়ির বাইরে বের হয় না। তাছাড়া শীতকালীন সবজি বাজারে প্রচুর আমদানি থাকায় শুটকি বিক্রি কম হয়। ঘন কুয়াশার কারণে রোদ না থাকায় বিশেষ করে সামুদ্রিক শুটকি বিবর্ণ ও গন্ধ হয়ে যায়। ক্রেতারা তা দেখে কিনতে চায় না। তাই সামান্য শুটকি নিয়ে ফিরে যাচ্ছি।’
নিয়ামতপুর শুটকি মাছ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি বাছেদ আলী বাখার জানান, ব্যবসা একেবারে মন্দা। পাইকাররাও আসছেন না। তার ওপর ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যাংকের চাপ। টাকা অনাদায়ে মামলার হুমকি। এসব কারণে অনেক ব্যবসায়ী শুটকি ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে এখানকার সব আড়তদারই ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছেন। লোকজনের আনাগোনা কমে যাওয়ায় শুঁটকি ব্যবসা আগের মতো চলছে না।
নীলফামারী জেলা মৎস্য দপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, দেশে শুটকি সংরক্ষনের জন্য সরকারের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। যা দেশের মৎস্যজাত আমিষের চাহিদা পূরণে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি রফতানি আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।