নদীঘেরা বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে ঝড়ঝঞ্ঝার মৌসুমেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোট ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। মেঘনা, গজারিয়া, মাসকাটার মতো বড় নদী পেরিয়ে জেলেদের মাছধরা ট্রলারে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে মানুষ যাচ্ছে । অবৈধ এসব ট্রলারে তাই প্রতি বছরই ঘটছে দুর্ঘটনা।
গতকাল শুক্রবারও এমন দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হন। নিখোঁজ রয়েছেন ৩ জন। স্থানীয় প্রশাসন এ ধরনের ইঞ্জিনচালিত ট্রলার অবৈধ স্বীকার করে জানিয়েছে, দুর্ঘটনা রোধে শনিবার থেকেই ঘাটে ঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের তদারকি চলবে।
মেহেন্দীগঞ্জের দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রিন্টু দেওয়ান বলেন, গজারিয়া নদীতে বেশ কয়েকটি খেয়াঘাট আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দড়িরচর-মাঝেরচর, নতুনহাট-মাঝের চর, পার্শবতী জয় নগর ইউনিয়নের নলবুনিয়া-পোলতাতুলি, রহমানের হাট-পোলতাতলি। শুক্রবার দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটি ছিল জেলেদের। তবে সাধারণ যাত্রীবাহী ট্রলার এবং নৌকাও উত্তাল নদীতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এ জন্য প্রশাসনের কোনো নজরদারিও নেই।
দড়িরচর খাজুরিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী এ প্রসঙ্গে বলেন, মানুষের মুখে মুখে শুনেছেন শুক্রবার ট্রলার ডুবেছে। তার কাছে কেউ অভিযোগ দেননি, তাই যাননি। তাঁর এলাকায় যেসব খেয়াঘাট রয়েছে সেগুলোতে চলাচলরত ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের অনুমতি আছে কি না এ প্রসঙ্গে বলেন, নিয়ম তো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমতি নেওয়া। কিন্তু স্থানীয় নেতারা অনুমতি ছাড়াই ঘাট পরিচালনা করেন।
তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বাচ্চু বলেন, এ রুটে তো যাত্রীবাহী ট্রলার ছাড়াও জেলে ট্রলার চলে। ট্রলারগুলো চলাচলের অনুমতি আছে কি না তা তাঁর জানা নেই। তবে চেয়ারম্যান অনুমতি না দিলে কীভাবে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারগুলো চলছে। তাঁর লোকেরাই তো এগুলো চালাচ্ছে।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, এ ধরনের ট্রলারের কোনো টাইম টেবিল বিআইডব্লিউটিএ দেয়নি। তা ছাড়া ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশের উপকূলীয় এলাকার নৌপথেই এমবি শ্রেণির মোটর বোট চলতে পারবে না।
এ ব্যাপারে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুন্নবী আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুক্রবারই তিনি দেখেছেন নদীতে ঢেউ মারাত্মক, রোলিং হচ্ছে। এর মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে গেল। তিনি বলেন, ছোট ট্রলার, ছোট নৌকা এই মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে নদীতে চলতে পারবে না। এদের বৈধতাই নেই। তিনি বলেন, শনিবার থেকেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মেহেন্দীগঞ্জের সব নদীতে চলমান খেয়াঘাটের ট্রলারের অবস্থা খতিয়ে দেখবেন।
ইউএনও বলেন, ‘আমরা তো রুট পারমিট দিই না। এগুলোর দেখার জন্য নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ডও রয়েছে। এ জন্যই মনিটরিং জোরদার দরকার।’ তিনি দাবি করেন তাঁর আওতাধীন মেহেন্দীগঞ্জ মেঘনা, কালাবদর, মাসকাটা, গজারিয়া নদীর মতো উত্তাল নদী দ্বারা বেষ্টিত। এসব নদীপথের জন্য আরও নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ও কোস্ট গার্ডের ক্যাম্প দরকার।’