নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল ইঞ্জিনের ত্রুটি থেকেই। গতি বাড়ানোর জন্য লঞ্চটিতে অনেক বেশি শক্তিশালী অর্থাৎ বেশি হর্সপাওয়ার সম্পন্ন ইঞ্জিন বসানো হয়েছিল, যাতে ত্রুটি ছিল। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
গতকাল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবার অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড তদন্তে সাত সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. তোফায়েল ইসলাম।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন থেকেই লঞ্চে আগুন লেগেছে। আর এ জন্য লঞ্চের মালিক, ইনচার্জ মাস্টার, সুকানি, দুই ইঞ্জিনচালক ও চালকের সহকারীকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন থাকার পরও লঞ্চটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সদরঘাটের সার্ভেয়ার ও ইন্সপেক্টরকেও দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সসংক্রান্ত বিধিবিধান লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করা হয়েছে ইঞ্জিন পরিবর্তন করা ডকইয়ার্ডের মালিককেও।
এদিকে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগার পর, তা নেভানোর কোনো চেষ্টা করা হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিবেদনে ২৫ দফা সুপারিশ দিয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।
তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি সময় নেওয়া হয়েছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য। মালিক, সুকানিসহ যাঁরা ছিলেন, তাঁদের দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। লঞ্চটি নির্মাণের ক্ষেত্রেও দুর্বলতা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য যাঁরা-ই দায়ী হোক, সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনা উদ্ঘাটনে ১৭ সদস্যের নাগরিক তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান।
এরই মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের মামলায় অভিযান-১০ লঞ্চের তিন মালিককে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর আগে, গত ২৬ ডিসেম্বর স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জয়নাব বেগমের নৌ-আদালতে নৌ-অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান বিশেষ মেরিন আইনে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
২৩ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধসহ আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী। এখনো নিখোঁজ অনেকে। ঘটনার পর এর কারণ অনুসন্ধানে ২৪ ডিসেম্বর ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। শুরুতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ওই কমিটিকে তিন কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়। পরে সেই সময় বাড়ানো হয় আরও তিন দিন।