ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় লটারিতে নির্বাচিত কৃষকেরা খুচরা বাজারে গম বিক্রি করছেন। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা বেশি পাওয়ায় তাঁরা খাদ্যগুদামে গম দেননি। ৪ হাজার ৪৫২ মেট্রিক টন গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও গতকাল শনিবার পর্যন্ত মাত্র তিন মেট্রিক টন গম কিনতে পেরেছে খাদ্যগুদাম।
১ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত গম সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করা হলেও গমের মৌসুমের শেষে এসে মাত্র একজন কৃষকের কাছ তিন মেট্রিক টন গম কিনতে পেরেছে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ। এতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হওয়ার পথে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত বাকি ১ হাজার ৪৮৩ জন কৃষকের কেউ গম দেননি। উপজেলায় সরকারিভাবে ২৮ টাকা গমের কেজি ধরা হয়।
উপজেলা খাদ্যগুদামের কর্মকর্তারা বলছেন, খুচরা বাজারে সরকারি দর থেকে কেজিতে ১০ টাকা বেশি পাওয়ায় কৃষকেরা উৎপাদিত গম সেখানে বিক্রি করছেন। এ কারণে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরেও গম কেনা যাচ্ছে না।
খাদ্যগুদামে গম না দেওয়ার বিষয়ে কৃষকেরা জানান, সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে, তা খুচরা বাজারের থেকে কেজিতে ৯-১০ টাকা কম। বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় গুদামে গম দিলে লাভ কম হবে। এ ছাড়া খাদ্যগুদামে গম দিলে বস্তার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অতিরিক্ত পরিবহন খরচ লাগে। তাই বাড়ি থেকেই ফড়িয়াদের কাছে গম বিক্রি করা হচ্ছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় জানায়, সরকারিভাবে ৪ হাজার ৪৫২ মেট্রিক টন গম সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। গত ১৮ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবিরের সভাপতিত্বে এক অনুষ্ঠানে উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের দেওয়া ১৮ হাজার ৮১২ জন কৃষকের নামের তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে ১ হাজার ৪৮৪ জন কৃষককে নির্বাচন করা হয়।
জানা গেছে, উপজেলায় দুটি খাদ্যগুদাম রয়েছে। এর মধ্যে পৌরশহরের রাজবাড়ী খাদ্যগুদামে গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। নেকমরদ গুদামে ছিল ২ হাজার ৫২ মেট্রিক টন। কিন্তু দুই খাদ্যগুদামে এ পর্যন্ত মাত্র ৩ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘গমের মণ মৌসুমের শুরুতে ছিল ১ হাজার ১০০। এখন ১ হাজার ৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তাই কৃষকেরা গম খাদ্যগুদামে দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।’
রাজবাড়ী খাদ্যগুদামের উপসহকারী খাদ্য কর্মকর্তা কাউসার আলী বলেন, ‘বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকেরা এবার গম দিচ্ছে না। এই গুদামে এবারে কেউ গম দেয়নি। গম সংগ্রহ শূন্যের কোঠায়।’
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইশকে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘গম সংগ্রহের জন্য কৃষকদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কেনা সম্ভব হয়নি। খুচরা বাজারে বেশি দাম পাওয়ায় তাঁরা গুদামে এবারে দেননি।’