আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
লাখ টাকা থেকে কোটি টাকা ঋণের প্রলোভন দেখিয়েছে ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন। গাইবান্ধার সাতটি উপজেলায় অন্তত ২০ হাজার মানুষ এ প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হয়েছেন।
জানা গেছে, বিভিন্ন ইউনিয়নে সংগঠনটি গত দুই মাসে সুপারভাইজার নিয়োগ দিয়ে এসব নারী-পুরুষকে সদস্য বানিয়েছে। পরে তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র ও অনলাইন চার্জ বাবদ ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়।
প্রতারক চক্রের সব সদস্য এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন। এর ফলে জেলার প্রায় ২০ হাজার নারী-পুরুষ তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্যসহ হারিয়েছেন অর্থ। ভুক্তভোগীরা প্রতারক চক্রের সদস্যদের অফিস ও বাড়িতে গিয়ে তাঁদের খুঁজে পাচ্ছেন না। তাঁদের স্বজনেরাও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে নারাজ।
সংঘবদ্ধ চক্রটির প্রধান আরিফ মিয়া। তাঁর গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পদুমশহর ইউনিয়নের পদুমশহর গ্রামের মিয়া বাড়ি এলাকায়। সদস্যদের ফরমে লেখা ছিল ‘বিপুল ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা বরাবরে পুঁজির জন্য ঋণের আবেদন।’
প্রতারক চক্রের অন্য সদস্য শিউলি খাতুন। বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের খামার রঘুনাথপুরে। তিনি বল্লমঝাড়, তুলসীঘাট ইউনিয়ন ও গাইবান্ধা পৌরসভার সুখশান্তি এলাকা থেকে কমপক্ষে ৮ হাজার নারী-পুরুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
গাইবান্ধার সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের প্রতারণার শিকার হওয়া ফিরোজা বেওয়া বলেন, ‘কিস্তি ছাড়াই এক লাখ ট্যাকা দেওয়ার কথা বলে, ভোটার কাড আর ট্যাকা নিয়া গেল এক মাইয়া আসে। এখন মানুষের মুখে শুনছম, তাই নাকি এল্লা নিয়ে পালে গেছে। মোর যে গোটাল আইডি কার্ডখান জমা দিছোম। দেখ তো আল্লাহ মোর ভোটার কাডখ্যান এখন কই পাম।’
বল্লমঝাড় ইউনিয়নের খামার রঘুনাথপুর গ্রামের ঋণের ফরম সংগ্রহকারী নুরবানু বলেন, ‘কোটি টাকার স্বপ্ন দেখায়ে গ্রামত থেকে আমারসহ হাজার হাজার মহিলার আইডি কার্ড আর টাকা নিয়েছেন শিউলি। তিনি আর বাড়িতে থাকেন না। তাঁর স্বজনদের বিষয়টি জানালে কোনো পাত্তা দিচ্ছেন না। তাঁরা বলছেন, যার কাছে দিছেন তার কাছ থেকে নেন। আমরা এসব জানি না। শাহজাদা, লাইলী, আইরিম, আমেনা, জোতি, হাসনা, রোকেয়া, এলিলা, হাসিনা, ছবিরন, আসমা, কেয়াম, সাইদুর, হাসেম আলী, আব্দুর রহমান, আইজারসহ কয়েক হাজার নারী-পুরুষের কাছ থেকে লাখ টাকা থেকে কোটি টাকার ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য ও টাকা।’
গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, কোনো ব্যক্তির তথ্য কারও সংগ্রহ করার অধিকার নেই। কোনো কিছুর প্রলোভনে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য অন্যকে দেওয়া ঠিক নয়। এসব কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।