মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
শ্বশুরবাড়ির লোকজন শারীরিক নির্যাতন করে ফেলে দেন হাওরে। সেখান থেকে অচেতন অবস্থায় এক জেলে উদ্ধার করেন। বেঁচে ফিরে আবারও শুরু করেন পড়ালেখা। সাহসিকতায় তিনি হয়েছেন জয়িতা। নাম হাসনা হেনা মনির। ‘নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরুর’ ক্যাটাগরিতে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হন তিনি।
হাসনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে স্বীকৃতিস্বরূপ ক্রেস্ট, সনদ ও নগদ অর্থ পুরস্কার গ্রহণ করেন। তিনি জীবনযুদ্ধে লড়াই করা এক সংগ্রামী নারী। ২০ বছর বয়স থেকেই কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয় তাঁকে, এখন বয়স ৩৩।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরাবাজার ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের কুটি মিয়ার মেয়ে হাসনা। বিয়ে হয়েছিল ২০০৭ সালে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মুমিনপুর গ্রামের ইংল্যান্ডপ্রবাসী শাহাব উদ্দীনের সঙ্গে। উচ্চমাধ্যমিকে থাকা অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের কারণে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি।
বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে চলতে থাকে নির্যাতন। একসময় নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে ফেলে দেয় বাড়ির পাশের হাকালুকি হাওরে।
এরপর শুরু হয় বেঁচে থাকার যুদ্ধ, ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধ। শুরু করেন লেখাপড়া। প্রস্তুতি নেন এইচএসসি পরীক্ষার, টাকার অভাবে মায়ের শাড়ি বিক্রি করে পরীক্ষার খরচ জোগান। এইচএসসি শেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক শেষে পরে এমসি কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেন ২০১৮ সালে।
হাসনা হেনা জানান, বিয়ের দুই মাস পর ইংল্যান্ডপ্রবাসী স্বামী চলে যান প্রবাসে। সেখানে তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন। ওই বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করলে নির্যাতন করা হতো। এদিকে যৌতুকের জন্যও মারধর করা হতো। পরে যৌতুক হিসেবে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেন। এরপরও থামেনি নির্যাতনের মাত্রা।
একসময় লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় স্বামী ও শাশুড়ি মিলে মাথার চুল কেটে দেন। এ অবস্থায় হাসনা হেনাকে দুই দিন বাথরুমে আটকে রাখা হয়।
হাসনা হেনা বলেন, ‘পাঁচ ভাইবোনের ছোট এবং আদরের ছিলাম। ২০০৪ সালে বাবা ও ২০১১ সালে মাকে হারাই। এদিকে বিয়ের পর থেকে জীবনে নেমে এল বিপর্যয়। অনেকে সালিসির নামে করেছে প্রতারণা। আত্মসাৎ করেছে টাকা। কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেছি। বর্তমানে টিউশনি করে জীবন কাটছে। ভালো চাকরি করলে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা পাল বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে হাসনা হেনাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’