শরীয়তপুরের জাজিরায় স্কুলছাত্র শাকিল মাদবরকে (১৫) অপহরণ করে হত্যা ও লাশ গুমের মামলায় দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক আব্দুস সালাম খান এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন জাজিরার হাজি মমিন আলী ফরাজী কান্দি গ্রামের মজিবর মাদবরের ছেলে সাকিব মাদবর ওরফে বাবু (২২) ও মাজদ ঢালী কান্দি গ্রামের আব্দুল খালেক মোড়লের ছেলে ইমরান মোড়ল (২২)। মামলার অপর ৪ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
নিহত শাকিল মাদবর জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা হাজী কালাই মোড়ল কান্দির এলাকার সালাম মাদবরের বড় ছেলে। সে অ্যাম্বিশন কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৫ জুন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শিক্ষার্থী শাকিল মাদবরকে খেলার কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় অভিযুক্ত সাকিব মাদবর বাবু। ওই দিনই আক্তার মাদবর, সজিব মাঝি, ইমরান মোড়ল, মহসিন হাওলাদার ও স্বপন সরদারের সহযোগিতায় তাকে অপহরণ করে। পরে উপজেলার মোসলেম ঢালীর কান্দি গ্রামের বারেক মৃধার বাড়ির পাশে আটকে রাখে সাকিব ওরফে বাবু। পরের দিন সকাল ৯টার দিকে শাকিলের চাচার মোবাইল নম্বরে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণ চক্রের সদস্যরা। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে ওই দিন বিকেলে অভিযুক্ত সাকিব ওরফে বাবুকে আটক করে জাজিরা থানা-পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মামলার অপর আসামিদের সহযোগিতায় শাকিলকে হত্যার কথা স্বীকার করে সাকিব ওরফে বাবু। পরে সাকিবের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জাজিরার পশ্চিম নাওডোবা এলাকার নির্মাণাধীন রেল সেতুর ৩৯ নম্বর পিলারের পূর্ব পাশের ভরাট করা বালুর নিচ থেকে শাকিলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘শিশু শাকিল মাদবরের অপহরণ ও হত্যা মামলায় সাকিব ওরফে বাবু ও ইমরান মোড়ল নামের দুই আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই মামলায় সাতজন আসামি ছিলেন। যার মধ্যে চারজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। বাকি এক আসামি বাবু ফরাজীর আইনজীবী হাইকোর্টে আপিল করলে তাঁর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। স্থগিত আদেশ শেষ হলে তার বিরুদ্ধে এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। মামলার রায়ে বাদী পক্ষ পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। খালাস পাওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।’
আসামি পক্ষের আইনজীবী মিলন রহমান মুরাদ বলেন, ‘আসামি ইমরান মোড়লের বিপক্ষে যে রায় হয়েছে তাতে সে সঠিক বিচার পায়নি। মামলায় ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে সে কোথাও বলেনি যে, হত্যার সঙ্গে জড়িত সে ছিল। বিষয়টি সে জানতেন। তার বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। আমরা ন্যায় বিচার পেতে উচ্চ আদালতে যাব।’