গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরিতে যানবাহন পারাপার কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। ঘাটে এখন যানজট না থাকলেও ফেরিজটে চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তি অব্যাহত রয়েছে।
নদীতে তীব্র স্রোত ও বড় বড় ঢেউয়ের কারণে ফেরি চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। স্রোতের বিপরীতে পারাপার হতে আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ
সময় লাগছে।
দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশ ও রাজধানী ঢাকায় যাওয়ার অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম ছিল রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের আগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী ও ৭ থেকে ৮ হাজার যানবাহন পারাপার হতো। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর যানবাহন ও যাত্রী পারাপার নেমে এসেছে এক অর্ধেকে। শুক্রবার সকাল থেকেই ফাঁকা পড়ে আছে এই ঘাট।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ও দূরপাল্লার গণপরিবহন যা আসছে তা লাইনে দাঁড়িয়ে না থেকেই আগের সিরিয়ালে থাকা ফেরিতে গিয়ে উঠছে। যানবাহন কম থাকায় ফেরিতে উঠে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ফেরি ছাড়ার। যতক্ষণ না পর্যন্ত ফেরি লোড হয়ে পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা ফেরিগুলো ঘাট না পেয়ে অপেক্ষায় থাকছে। তবে মাঝে মধ্যে এক ঘাটে এক সঙ্গে চারটি ফেরি এসে গেলে ফেরি ফাঁকা রেখেই পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন দৌলতদিয়া ঘাটে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার ৫টি ঘাটেই একাধিক ফেরি রয়েছে। যেসব যানবাহন ফেরি পার হতে ঘাটে আসছে তা লাইনে না থেকেই সিরিয়ালে থাকা ফেরিতে গিয়ে উঠছে।
পাটুরিয়া থেকে সকাল ১০টার দিকে ফেরি ‘কেরামত আলী’ দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ঘাটে এসে ভিড়ে। যানবাহন আনলোড করার পর দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ফেরিটি। এর কিছুক্ষণ পরেই রো রো ফেরি শাহ পরান ও আরও একটি বড় ফেরি ৫ নম্বর ঘাটে আসে।
এর পাশের ৬ নম্বর ঘাটে ভিড়ে ছিল ইউটিলিটি ফেরি মাধবীলতা। এই ফেরিটির সিরিয়াল আগে থাকায় ৫ নম্বর ঘাটে অপেক্ষায় থাকা ফেরিটি লোড হতে দেরি হয়। যার ফলে ওই দুটি ফেরি পকেট না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর ৬ নম্বর ঘাটের ফেরিটি ছেড়ে গেলে ৫ নম্বর ঘাটে থাকা কেতামত আলী ফেরি প্রায় ১ ঘণ্টা পর লোড হয়। লোড শেষে ফেরি ছেড়ে গেলে শাহ পরান ফেরিটি ওই পকেটে লাগে।
শাহ পরান ফেরির যাত্রী আলমগীর শেখ বলেন, ‘আমাদের ফেরিটি পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে এসে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে লাগলেও প্রায় ১ ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকে আনলোড হতে।’
সাকুরা পরিবহনে কর্মরত দৌলতদিয়া ঘাট তত্ত্বাবধায়ক সালাহউদ্দিন আহম্মেদ জানান, ‘আমাদের এই ঘাট দিয়ে দিনরাত দিয়ে প্রায় ৬০টি ট্রিপ চলাচল করত। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর থেকে ট্রিপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫-৬ ট্রিপে। এতে ঘাট এখন যানবাহন শূন্য।’
যশোর থেকে ছেড়ে আসা কাভার্ডভ্যান চালক আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যশোর থেকে চালবোঝাই করে ভোরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। এসে দেখি ঘাট একেবারে ফাঁকা। তবে ঘাটে ফেরি ভিড়ে আনলোড হতে দেরি হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে দৌলতদিয়া ঘাট পারাপার হওয়া যানবাহনের সংখ্যা কমে গেছে। ঘাটের তুলনায় ফেরি বেশি থাকায় একসঙ্গে এক ঘাটে একাধিক ফেরি ভিড়ছে। এতে আনলোড হতে সময় লাগছে।’