চটপটির বাটি ও চামচের টুংটাং। কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ কাটার কচকচ শব্দ। কথা বলার ফুরসত নেই। হাতে কাজ আর কাজ। একের পর এক মানুষ আসছে। তাদের পছন্দমতো বানাতে হচ্ছে চটপটি। তারপর তুলে দিতে হচ্ছে হাতে হাতে। ৬৫ বছর বয়সী এই চটপটি বিক্রেতার নাম আবদুল আজিজ। তবে তিনি ঠাকুরগাঁও শহরে পরিচিত আজিজ ভাই নামে। ৩৯ বছর ধরে ঠাকুরগাঁও শহরের বড় মাঠের এক কোণে চটপটি ও ফুচকা বিক্রি করে চলেছেন তিনি। তাঁর দোকানের নাম ‘ছবি চটপটি ঘর’।
দোকানের এই নামের মাঝেই লুকিয়ে আছে আবদুল আজিজের আরেকটি পরিচয়, যা কম মানুষই জানেন। চটপটি ও ফুচকা বিক্রির আড়ালে তিনি একজন চিত্রশিল্পী। ছবি আঁকায় প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেই আজিজের। জানা নেই চিত্রাঙ্কনের ব্যাকরণ। তারপরও তাঁর আঁকা ১১টি চিত্রকর্ম ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল জেলা শহরের পাঠাগার মিলনায়তনের প্রদর্শনীতে!
স্কুলে পড়ার সময় থেকে ছবি আঁকার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল আজিজের। পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন ছবি দেখে তিনি প্রথমে আঁকা শুরু করেন। বন্ধুবান্ধব তাঁর এই ছবি আঁকা নিয়ে বিভিন্ন কটু কথা শোনাতেও ছাড়ত না। এ নিয়ে মনের ভেতর হতাশা ও কষ্ট জন্মে। মনে মনে ঠিক করেন, যেভাবেই হোক, ছবি তিনি আঁকবেনই। পরে ঠাকুরগাঁও রিভারভিউ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন আজিজ; কিন্তু অকৃতকার্য হন। অভাব-অনটনের কারণে ঢাকায় একটি খাবারের দোকানে কাজ নেন তিনি। ধীরে ধীরে সেখানেই শিখে ফেলেন চটপটি ও ফুচকা তৈরির কৌশল। সারা দিন দোকানে কাজ করে রাতের বেলা তিনি কাগজের ওপর পেনসিল দিয়ে ছবি আঁকতেন। ঢাকা থেকে ১৯৮৪ সালে ঠাকুরগাঁও ফিরে বড় মাঠের এক কোণে নিজেই দোকান দেন। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তিনি বিক্রি করেন চটপটি ও ফুচকা। আর রাত জেগে চালিয়ে যান ছবি আঁকা।
আজিজের আঁকা ছবিগুলোতে মূলত মানুষ ও প্রকৃতি জায়গা পেয়েছে। তিনি সবুজ প্রকৃতি, জুমচাষ, মাছ ধরা শেষে জেলেদের বাড়ি ফেরা, তাঁত বোনা, নদীনালা, চা-বাগানে পাতা সংগ্রহের দৃশ্য ইত্যাদি আঁকেন। আজিজ জানিয়েছেন, জীবনের বাস্তবতায় চারুকলায় পড়া না হলেও কোনো আক্ষেপ নেই তাঁর।