সম্পাদকীয়
বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সব কবির কাছেই বারবার ফিরে গিয়েছি, যাঁদের লেখায় নিজে অভিনয় করেছি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। যাঁরা গভীর, আবেদনময়, অনেক সময়ই গোপন। অধিক জনপ্রিয়, মাঠময়দানের কবিকে আমি এড়িয়ে গিয়েছি।
আমার দিদিমার শোয়ার ঘরে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান গোপনীয়তার কারণেই এক নিবিড় প্রভাব তৈরি করে। ব্লেক আমার সঙ্গে কথা বলতেন ওই ছোট্ট কালো ছেলেটির মাধ্যমে। সে-ই ছিল আমার ভেতরে পাওয়া স্বরের গোপন সূত্র। তাকে দেখা যেত না বা দেখা গেলেও তা ছিল অস্পষ্ট এক অবয়ব। কিন্তু আমি জানতাম, সে যা বলছে তা সত্যি, ওর নশ্বর দেহে রয়েছে উজ্জ্বল এক পবিত্রতা।
এটা বলছি তার কারণ, ওই কালো ছেলেটির মধ্যে কোনো প্রতিশোধস্পৃহা বা দোষারোপ করার ব্যাপার নেই। শুধু বিশ্বাস রয়েছে মৃত্যুর পরে সে পাবে এক সুন্দর নিখুঁত পৃথিবী, যেখানে সে যা ঠিক, সেভাবেই স্বীকৃত হবে। অবশ্যই এই আশা বাস্তবোচিত নয়; বরং বাস্তবকে সে অবজ্ঞা করে, শেষ পর্যন্ত কবিতাটি হয়ে ওঠে হৃদয়বিদারক এবং গভীরভাবে রাজনৈতিকও। যে ন্যায্য ক্রোধ এবং ক্ষত থেকে সেই কালো ছেলেটিকে তার মা বাঁচিয়ে রেখেছিল, ছেলেটি যা অনুভব করতে দেয়নি নিজেকে, তা গ্রাস করে পাঠক বা শ্রোতাকে।
যেসব কবিতায় গোটা জীবন ডুবে থেকেছি, সেগুলো খুবই ঘনিষ্ঠ স্বরে কথা বলে, গোপন ষড়যন্ত্রের মতো, যে কবিতায় পাঠক অথবা শ্রোতাও নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যায়, হয়ে ওঠে এক সহষড়যন্ত্রকারী। ডিকিনসন বলছেন, ‘আমি তো কেউ নই, তুমিও কি কেউ নও? কাউকে জানিয়ো না আমাদের জুটি হবে।’
টি এস এলিয়ট বলছেন, ‘চলো আমি আর তুমি, চলা যাক/ সন্ধ্যা আকাশের নিচে চাদর মেলেছে/ যেভাবে অসার এক রোগী টেবিলে রয়েছে ছড়িয়ে...।’ আসলে এলিয়ট তো কাউকে আহ্বান করছেন না, তিনি পাঠকের কাছ থেকে কিছু চাইছেন। অন্যভাবে বলা যায় শেক্সপিয়ারের ‘আমি কি তোমাকে তুলনা করব একটি গ্রীষ্ম দিবসের সঙ্গে?’
মার্কিন কবি-প্রাবন্ধিক লুইস গ্লুক ২০২০ সালে নোবেল পুরস্কার পান।