সিলেট প্রতিনিধি
সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকার নামকরণ করা হয়েছে দিঘির নামে। একসময় বিভিন্ন এলাকায় ২০ থেকে ২৫টি দিঘি ছিল। তবে বর্তমানে বেশির ভাগ দিঘিরই অস্তিত্ব নেই। ভরাট, দখল, দূষণ আর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে হারিয়ে গেছে দিঘিগুলো। প্রতিনিয়তই বাড়ছে ভবনের সংখ্যা। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পানির সমস্যাও।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিসিকের ৭০ হাজারের মতো হোল্ডিং রয়েছে। এর মধ্যে পানির জন্য তালিকাভুক্ত গ্রাহক রয়েছেন মাত্র ১৬ হাজার ৫০০। এই সাড়ে ১৬ হাজার গ্রাহককেও নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
এরই মধ্যে সিলেটে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও ১২টি ওয়ার্ড। এতে আরও কয়েক হাজার গ্রাহক যুক্ত হবেন সিলেট সিটি করপোরেশনে। এত গ্রাহককে কীভাবে পানি সরবরাহ করা হবে তা নিয়ে এখনই সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
যদিও সিটি করপোরেশনে পানি সমস্যা মেটাতে ইতিমধ্যে সিলেট ওয়াসা প্রতিষ্ঠা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এটি দেশের পঞ্চম ওয়াসা। তবে শুধু ওয়াসা প্রতিষ্ঠা করলেই পানি সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, সিলেট সিটিতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি জরুরি মৌলিক চাহিদা পানির দিকেও নজর দেওয়া। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বিকল্প হিসেবে সিটি করপোরেশনকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে নদী খনন করে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রবীণ এক ব্যক্তি বলেন, নগরীর মাছুদিঘিসহ অনেক দিঘি দখল-দূষণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এই দিঘিগুলো দূষণ না হলে নগরবাসীর পানির সংকট অনেক কমে যেত।
তবে সিলেট সিটি করপোরেশন বলছে, নগরীতে অনুমোদিত গভীর ও অগভীর নলকূপের সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৮০০। নগরীর প্রায় ৮ লাখ মানুষের প্রয়োজন মেটাতে প্রতিদিন প্রায় ৮ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। বিপরীতে ৪-৫ কোটি লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৪ কোটি লিটার পানির ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।
তবে সেই হিসাবকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর। তিনি বলেন, ‘সিলেটে ৮ লাখ মানুষ থাকলেও আমাদের পানির গ্রাহক রয়েছেন আরও কম। আমাদের গ্রাহকদের যেই পরিমাণ পানি সরবরাহ প্রয়োজন সেই অনুপাতে আমরা সরবরাহ করতে পারছি। কারণ ৮ লাখ মানুষই আমাদের গ্রাহক নন। তবে অবৈধ কিছু সংযোগের কারণে আমাদের সরবরাহে অনেক সময় ঘাটতি থেকে যায়। পাশাপাশি যদি কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি থাকে সেই ক্ষেত্রে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।’