ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
‘এই চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা। কাজে যেতে পারি না। সাততলা ভবনের বাইরে প্লাস্টারের কাজ। কুয়াশায় এত ওপরে কাজ করা যায় না। তাই মালিক বলেছে, কুয়াশা না কমলে কাজে ফেরার দরকার নেই। এই কদিন তো আর টাকা দেবে না। ধারদেনা করে চলতেছি। নতুন বছরে একটু মুরগির মাংস কেনারও পয়সা নেই।’
নির্মাণশ্রমিক সবুজ মোল্লা এই শীত ও ঘন কুয়াশায় তাঁর ভোগান্তির কথা জানিয়ে মন খারাপ করে থাকেন। একটু পর জানালেন, বড় মেয়েটা এবার ক্লাস ফোরে। নতুন বই আনতে গেছে। চাইছিল একটা নতুন ব্যাগ। তা কিনে দিতে পারিনি।
সবুজ মোল্লার মতো নিম্ন আয়ের মানুষেরা সাম্প্রতিক সময়ে ঘন কুয়াশা ও শীতে পড়েছে বিপাকে। একদিকে রাত বাড়লেই বাড়ে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা। অন্যদিকে ঘন কুয়াশায় অনেকের কাজ জুটছে না। ফলে ধারদেনা করে নতুন বছর শুরু হয়েছে এসব মানুষের। নতুন বাজার এলাকায় ব্রিজের ওপরে ও বাসা বাড়িতে রং দেওয়া শ্রমিক রশিদ মিয়া বলেন, ‘আজ এক সপ্তাহ হলো কাজ পাইনে। এত ঠান্ডা যে ঘর থেকে বের হতে দেরি হয়। বেলা ১১টার আগে বের হওয়া যায় না। দেরি করে বের হই বলে কাজ পাওয়া যায় না। কারণ এ শীতে যাঁরা বাসাবাড়ির মালিক,
তাঁরাও বের হচ্ছেন কম। ফলে কাজ ছাড়া আছি আজ রোববার ধরে আট দিন। এভাবে চললে না খেয়ে থাকা লাগবেনে।’
নছিমনচালক আতর আলী বলেন, ‘একবার চাল টেনে পাই খরচা বাদ দিয়ে ৫০০ টাকা। দুই দিন হলো পাইকারি বাজার খোলে বেলা ১১টার পড়ে। কাস্টমার কম। তাই কোনো ক্ষ্যাপ নেই। টাকাও নেই। ভাড়া মারতে পারিনি। কুয়াশা বেশি বলে কুষ্টিয়া থেকে চালের ট্রাকও আসছে কম। গাড়ি না আলি আমার চাল টানা হয় না। কী করব ভাই, খুব বিপদে আছি।’
মাগুরায় ভোররাত থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে শহর এলাকা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মজীবী মানুষের দেখা মেলে। এ সময় ফেরি করে শীতের মাফলার, টুপি, হাতমোজা বিক্রি করে হকাররা। তাঁদের একজন রানা হোসেন। পোস্ট অফিসের সামনে তাঁর ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বলেন, ‘শীত বাড়লে আমাদের বিক্রি বাড়ে। কিন্তু এমন শীত যে সারা দিন মানুষ ঘর থেকে তেমন প্রয়োজন ছাড়া বের হন না। এরকম চললে তো ব্যবসায় লসই হবে। সঙ্গে পুঁজি হারাতে হবে।’