শোভা চৌধুরী, কবি
বাজেট আসে বাজেট যায়, কিন্তু হিজড়া সম্প্রদায়ের কোনো উন্নয়ন হয় না। উন্নয়ন হয় না বললে ভুল হবে। উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করা হয়। এক কথায় পিছিয়ে রাখা হয়। আমরা হিজড়া সম্প্রদায় বড় অসহায়।
সেই জন্মের পর থেকেই নেমে আসে ঘোর অমানিশার কালো থাবা। পরিবার সর্বদা বঞ্চিত করে রাখে। তারপর ভঙ্গুর সমাজব্যবস্থা এবং পরিশেষে রাষ্ট্র। সবাই হিজড়া সম্প্রদায়কে কুক্ষিগত করে রাখে। একটি গণ্ডির মধ্যে সর্বদা আবদ্ধ করে রাখতে চায়। কিন্তু কেন? এত ভয় কিসের?
আজ কেন হিজড়া সম্প্রদায় শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত? এর জবাব আপনাকেই একদিন দিতে হবে। আমরা মানি, শিক্ষাই আলো। আর আলো মানেই শক্তি।
জাতীয় ঐকতানের বিশ্বভরা প্রাণ। সরকারি হিসাব মোতাবেক হিজড়াদের সংখ্যা সাড়ে ১২ হাজার। কিন্তু বাস্তবে এর অংশ আরও বিস্তর। হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা কোনো শিক্ষালয় নয়, গতানুগতিক প্রচলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রত্যেক মানুষের শিক্ষার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে হিজড়া ডেরায় গুরুর তদারকিতে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি হিজড়াদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে। ‘কাউকে বাদ দিয়ে নয়’-এর সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে। হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষিত হলেই চলবে না। সবাইকে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমবণ্টন সুনিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের সুযোগ দিন। আমরাও কাজ করে খেতে চাই। ভিক্ষাবৃত্তি কোনো পেশা নয়।
‘নবীর শিক্ষা—কোরো না ভিক্ষা’
মেহনত করো সবে।’
আমরা মেহনত করতে চাই, মেহনতের পরিবেশও চাই। শেষে বলতে চাই, বাজেটে এমন বরাদ্দ রাখুন, যাতে হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রত্যেকে শিক্ষার সুযোগ পায়। কাজের সুযোগ পায়।
আরও একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাসস্থান। আমাদের কোথাও বাসা ভাড়া দেওয়া হয় না। তাহলে আমরা যাব কোথায়? থাকব কোথায়? এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু কিছু হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। সে জন্য আমরা তাঁর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। কিন্তু এর পরিসর আরও বাড়াতে হবে।
হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রত্যেককে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব আপনার, আমার, সবার। হিজড়াদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটাতে হবে। অবহেলা, উপহাস, উপেক্ষা নয়; মানুষ হিসেবেই দেখতে হবে।
আমি নিশ্চিত, ‘আলো আসবেই’।