ঘিওর প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জে এবার ৫০৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। করোনা আর অর্থনৈতিক কারণে গত বছর ৪৬৩টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গতবারের চেয়ে এবার ৪৪টি বেশি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে।
মানিকগঞ্জ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনির্বাণ পাল বলেন, ‘সব পূজার মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে মণ্ডপ কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে করোনার প্রকোপ কম থাকায় মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। এসব মণ্ডপে প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত সুতলি, বাঁশ, মাটি ও রঙের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে গত বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে কারিগরেরা মজুরিও বাড়িয়েছে।’
সরেজমিনে পূজার মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, ঘিওরের বানিয়াজুরী মালাকার বাড়ি, বাসস্ট্যান্ড সর্বজনীন মণ্ডপ, ঘিওর কানাই বলাই মণ্ডপ, লোকনাথ মন্দির, পুখুরিয়া বাজার মণ্ডপ, তরা বাজার মণ্ডপ, মানিকগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি, দাশড়া, গঙ্গাধরপট্টিসহ প্রায় সব মণ্ডপেই প্রতিমা তৈরি করে মাটি শুকানোর কাজ চলছে। প্রতিমাগুলো দ্রুত শুকাতে বেশির ভাগ মণ্ডপে ফ্যানের বাতাস দেওয়া হচ্ছে। পুরোপুরি শুকানোর পর প্রতিমার গায়ে আগামী সপ্তাহে রঙের কাজ শুরু হবে। তবে হাতে গোনা কয়েকটি মণ্ডপে এখনো খড়, মাটির কাজ চলছে।
ঘিওরের নিমতলা কালীবাড়ি লোকনাথ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক রাম প্রসাদ সরকার দীপু বলেন, ‘গত বছর করোনার প্রকোপ বেশি থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প আয়োজনে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিমা তৈরির কারিগরদেরও তেমন মজুরি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বছর করোনা থাকলেও প্রকোপ কিছুটা কম থাকায় গত বছরের চেয়ে মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে প্রতিমা তৈরির কারিগরদের চাহিদা বেড়েছে। কারিগরদের চাহিদা বাড়ায় তাঁরাও গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা তৈরি করতে একটু বেশি টাকায় চুক্তি করছে।’
জেলার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন পূজার মণ্ডপ বানিয়াজুরী মালাকার বাড়ির আয়োজক অমূল্য মালাকার বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেড়েছে। দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা দর্শন, প্রসাদ গ্রহণ ও নিরাপত্তার জন্য বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক রাখা হবে।’
উপজেলার তরা বাজার সর্বজনীন মণ্ডপে প্রতিমার কারিগর বলরাম পাল বলেন, ‘প্রতিবছর প্রতিমা তৈরি করে যা আয় হয়, তা সংসারের কাজে খরচ করি। তবে গত বছর করোনার কারণে দক্ষিণা কম ওঠায় প্রাপ্য অনুয়ায়ী মজুরি পাইনি। তবে এবার পরিস্থিতি ভালো থাকায় ভালো মজুরির আশা করছি।’
ঘিওর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, ‘শারদীয় দুর্গোৎসবে আইনশৃঙ্খলা সুন্দর ও স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রতিটি মন্দিরে পুলিশ, আনসার মোতায়েন করা হবে। কয়েকটি টিম মনিটরিং ও মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক প্রতিটি মন্দির পরিদর্শন করবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন।’
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘করোনার কারণে প্রতিটি মণ্ডপে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। দর্শনার্থী, ভক্ত ও পুরোহিতসহ সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মণ্ডপে নারী-পুরুষের যাতায়াতের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে। আতশবাজি ও পটকা ব্যবহার করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্গাপূজায় বরাদ্দকৃত চাল দিতে মণ্ডপের তালিকা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এসব মণ্ডপে পর্যায়ক্রমে চাল বিতরণ করা হবে।’