সম্পাদকীয়
আশুলিয়ার টঙ্গীবাড়ি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন এক শ্রমিক এবং পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনা কিছুদিন আগে শান্ত হয়ে যাওয়া গার্মেন্টসগুলোয় আবার আন্দোলনের জন্ম দেবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তা ঠেকাতে এখনই সব পক্ষ মিলে আলোচনার টেবিলে বসা উচিত।
টঙ্গীবাড়ির একটি কারখানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মালিক ও শ্রমিকপক্ষ আলোচনায় বসেছিল। আলোচনা দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হওয়ায় বাইরে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। পাশের দুই কারখানার শ্রমিকেরাও রাস্তায় নেমে আসেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় পুলিশ গুলি চালায়।
এ কথা অস্বীকার করা যাবে না, বাংলাদেশে পোশাকশিল্পের অনেক শ্রমিক হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও মাস শেষে সময়মতো মজুরি পান না। এমনিতেই কম মজুরি, তার ওপর সেই মজুরি সময়মতো না পেলে বিক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন। মালিকপক্ষ তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে খুব কম সময়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। গত সোমবার ঢাকার আশুলিয়ায় বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষও তেমন একটি ঘটনা। আজকের পত্রিকায় গতকাল মঙ্গলবার শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পোশাকশিল্প কারখানার প্রায় ২০০ শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে এক জরিপ থেকে জানা গেছে। তাঁরা এ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন বেতনবৈষম্য অবসানের প্রত্যাশা থেকে। গণ-অভ্যুত্থানের পর যখন অনেক সেক্টরের মানুষ তাঁদের পেশার বৈষম্য নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানাতে শুরু করেন, তখন গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরাও তাঁদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। সেই আন্দোলনের সময় বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে তৃতীয় শক্তির ইন্ধনের অভিযোগ তোলা হয়েছিল; কিন্তু সে রকম কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি। মূলত দীর্ঘ সময় ধরে এ খাতের শ্রমিকেরা নিষ্পেষণের শিকার। সরকার পরিবর্তন হলেও তাঁদের দাবিগুলোর কোনো ইতিবাচক সুরাহার চেষ্টা কি কেউ করেছে?
পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা বছরের পর বছর ধরে ন্যূনতম মজুরি, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করাসহ নানা দাবি নিয়ে যে আন্দোলন করে আসছেন, তা কি আমলে নিতে হবে না? তাজরীন, রানা প্লাজাসহ নানা কারখানায় বিভিন্ন সময়ে আগুনে ও বিল্ডিং ধসে শত শত শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। অসংখ্য শ্রমিক পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। ঠিকভাবে তাঁদের দায়িত্ব কেন মালিক ও রাষ্ট্র নেবে না?
যেসব দাবি আদায় না হওয়ার কারণে বারবার শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন করেন, সেই দাবিগুলোর দিকে যেন অন্তর্বর্তী সরকার নজর দেয়। এই সরকার যদি জনগণের সরকার হয়ে থাকে, তাহলে শ্রমিকেরাও যে জনগণের অংশ, সে কথা তাদের ভুলে গেলে চলবে না। আর শ্রমিক হত্যার বিচারের পাশাপাশি নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, এ কথাও ভুললে চলবে না।