সম্পাদকীয়
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের সময় একটু পানি অথবা স্যালাইনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠত মানুষ। নানাভাবে সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল, হঠাৎ করে যেন ঢকঢক করে পানি পান না করা হয়। ঠান্ডা পানি বা পানীয় পানে শরীরে কী কী ক্ষতি হতে পারে, তারও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি একটু একটু করে পান করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল।
তাপপ্রবাহের দিনগুলোর পর বৃষ্টি এনেছিল স্বস্তি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যখন সত্যিই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার কোনো সুযোগ আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। শীতল করবে মাটি, এ রকম আবহাওয়ার দেখা মেলা ভার। উষ্ণতার সঙ্গে আপস করে নিতে হচ্ছে।
এই যে উষ্ণতাকে মোলাকাত করতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ, তাতে কারও কারও ব্যবসা-বুদ্ধিও খুলে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে নকল পানীয় তৈরির ফুটেজ। কী অনায়াসে বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ব্র্যান্ডের নকল তরল পানীয়। বোতল, লেবেল সবই ঠিক আছে, শুধু পানীয় নকল। নকলবাজিতে বাঙালিকে হার মানাতে পারে—এমন জাতি কমই আছে। তাই এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশের সুযোগ নেই। কিন্তু যখন একেবারে অস্তিত্ব নিয়ে টান মারা হয়, তখন সে বিষয়ে কঠোর না হতে পারলে সমূহ বিপদ।
স্যালাইনের দাম খুব বেশি নয়। আমাদের খাদ্যাভ্যাসের কারণে খাবার থেকে শরীর সব সময় প্রয়োজনীয় উপাদান পায় না। তাই খাবার স্যালাইন খুব জরুরি একটি পানীয়। শরীরের নানা অসংগতিতে শান্তির প্রলেপ দিতে পারে এই স্যালাইন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, জীবনদায়ী এই স্যালাইনও নকল হচ্ছে। শিশুখাদ্য আর জীবনদায়ী ওষুধ কিংবা স্যালাইন নকল করা হলে তা যে অতি বড় মাত্রার অপরাধ, সে কথা বলে দিতে হয় না। সম্প্রতি এ রকম নকল শিশুখাদ্য-স্যালাইন প্রস্তুতকারীদের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
যে পণ্য তাঁরা উৎপাদন করছেন, তা যে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, সে কথা তাঁরা জানেন। কিন্তু নামকরা ব্র্যান্ডের মোড়কে রদ্দি মাল বাজারজাত করার সময় তাঁরা ভাবেনও না যে এতে করে ভোক্তার শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। ‘সবার ওপরে মুনাফা সত্য, তাহার ওপরে নাই’—এই হচ্ছে তাঁদের নীতি। আফসোস হচ্ছে, আমাদের নীতিনির্ধারকেরা সমাজে এমন ধারণার সৃষ্টি করতে পারেননি, যাতে এ ধরনের অপরাধের ব্যাপারে কঠোর হওয়া যায়। খাদ্যে ভেজাল বা অন্য ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করে খারাপ কিছু গছিয়ে দেওয়ার শাস্তি যে কঠোর হওয়া দরকার, সেটা বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এসব দ্রব্য উৎপাদন করে যে একধরনের ধীরগতিতে খুনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সেটা বোঝা দরকার।
এত বেশি জনসংখ্যা আমাদের এবং কাজের সুযোগ এত কম যে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে মানুষ জড়িয়ে যাচ্ছে, সেটা যেন কারও চোখেই পড়ে না। শিশুখাদ্য ও ওষুধ নকলের ব্যাপারে জিরো টলারেন্সই একমাত্র বাঁচার পথ। এদের হতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।