জামালপুরের বকশীগঞ্জে এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। তবে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ ও পানির অভাবে খেতেই পাট মরে যাচ্ছে। পাটের আঁশও শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।
বকশীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় দেশি ও তোষা পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হেক্টর জমিতে বেশি পাট চাষ করেছেন কৃষকেরা।
উপজেলায় বৃষ্টি না হওয়ায় চাষিরা হতাশ। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে অধিকাংশ খাল-বিলে পানিতে ভরপুর থাকত, সেখানে এখন অধিকাংশ খাল-বিল শুকনো। পানি না থাকায় পাট পচাতে পারছেন না কৃষকেরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃষ্টির আশায় পাট কেটে জমির পাশে, কেউবা রাস্তার পাশে, খাল-বিল বা ডোবার পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। অনেকে আবার খাল-বিল বা জলাশয়ের অল্প পানিতেই পাটের ওপর মাটি ও ভারী কিছু দিয়ে পাট পচানোর চেষ্টা করছেন। ডোবা কিংবা জলাশয়ে পাট জাগ দিয়ে পচানোর জন্য শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি দিতে দেখা গেছে।
স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা এ বছর পাট চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। নিচু এলাকায় অল্প পানির দেখা মিললেও উঁচু অঞ্চলে রয়েছে পানির সংকট। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে সমস্যা দূর হবে।
বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া গ্রামের কৃষক শফিকুল হোসেন, একই গ্রামের নাজমুল, ও উপজেলার বগারচর গ্রামের মজনু আলী ও ধানু মিয়াসহ একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
তাঁরা জানান, পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না। এতে মাঠ থেকে দূরে যেখানে পানি আছে, সেখানে পাট নিয়ে জাগ দিতে হচ্ছে। ফলে শ্রমিক খরচ অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে।
এক বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় গড় ফলন ১০ মণ। প্রতি মণ পাটের বর্তমান বাজার দর আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা। এ দামে পাট বিক্রি করলে তাঁরা খুব বেশি লাভবান হবেন না বলেও জানান।
কৃষক তাঁরা মিয়া বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমেও গ্রীষ্মের দাবদাহ। কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতেই পাট পুড়ছে। পাতা, কাণ্ড ও গোড়া মরতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় পাট কাটার সময় হলেও পাট জাগ দেওয়ার অসুবিধার কথা ভেবে পাট কাটতে পারছি না।’
তাঁরা মিয়া আরও বলেন, অনেকে পাট কেটেও পানির অভাবে জাগ দিতে না পেরে জমিতে পালা করে রেখেছেন। অনেকে আবার পুকুর বা ছোট জলাশয়ে সেচ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করেছেন। এতে তাঁদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ।
বকশীগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর আজাদ বলেন, ‘চাষিরা পাট কাটতে শুরু করেছেন। এখন সমস্যা পাট পচানোর পানির অভাব। আমরা চাষিদের কম ব্যয়ে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছি। এ পদ্ধতিতে পাট পচালে পাটের আঁশের মানও ভালো হয়।’
আলমগীর আজাদ আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। অনাবৃষ্টি হলেও পাটের উৎপাদন ব্যাহত হবে না। কয়েক দিন টানা বৃষ্টি হলে এ সমস্যা থাকবে না।