ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রখ্যাত ভাষাসৈনিক দবিরুল ইসলামের জন্মশতবার্ষিকী আজ ১৩ মার্চ। তিনি ভাষা সংগ্রামের জন্য কারাবরণও করেছিলেন। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সভাপতি।
দবিরুলের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আজ রোববার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ভাষাসৈনিক দবিরুল ইসলাম ১৯২২ সালে ১৩ মার্চ তৎকালীন দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহাকুমার বালিয়াডাঙ্গী থানার পাড়িয়া ইউনিয়নের বামুনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর স্বাধিকার আন্দোলনে পাকিস্তানি শাসকদের রোষানলে পড়ে ভাষা আন্দোলনে জড়িত হন দবিরুল ইসলাম। তিনি সর্বপ্রথম ছাত্রনেতা হিসেবে জেলখানায় বন্দী হন। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রামে ঠাকুরগাঁওয়ের দবিরুল ইসলাম বারবার কারারুদ্ধ হয়ে নির্যাতনের শিকারে অকালে প্রাণ হারান।
দবিরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী। ১৯৪৯ থেকে ’৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ঠাকুরগাঁওয়ে ওই সময় মাতৃভাষা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৪৯ সালে ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা হলে দবিরুল নিজ জেলায় চলে আসেন। ওই বছরের ১৩ মার্চ পূর্ববঙ্গে বিশেষ ক্ষমতাবলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। দিনাজপুর কারাগারে কারারুদ্ধ হন তিনি। কারা কর্তৃপক্ষ সরকারি মুসলিম লীগ কর্তাদের ইঙ্গিতেই দবিরুলের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। এ সংবাদ শুনে দবিরুলকে দেখতে দিনাজপুর ছুটে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তখন ১৪৪ ধারা জারি থাকায় বঙ্গবন্ধু তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। কারাগারে ঘণ্টা বাজিয়ে অকথ্য সেই নির্যাতনের কথা যে কেউ শুনলে আঁতকে উঠবে। এসব মনে হলে নিস্তব্ধ হয়ে যান দবিরুলের স্ত্রী আবেদা খাতুন।
এরপর বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে দবিরুল তৎকালীন দিনাজপুর জেলায় আসেন আইন পেশায় কাজ করতে। তখন রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই দাবিতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় তৎকালীন সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারারুদ্ধ করে রাখে। সেই সময়ও তিনি নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৬১ সালের ১৩ জানুয়ারি অকালে প্রাণ হারান দবিরুল। ১৯৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে দবিরুল যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে এমএলএ নির্বাচিত হন।