জীবনযুদ্ধে দারিদ্র্য বাধা হতে পারেনি পঞ্চগড়ের সাকিব, শান্ত, নাঈম আর ক্ষিতিশের। খেটে খাওয়া পরিবারের সন্তান হয়েও তাঁরা মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তাঁরা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
আটোয়ারী উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের রাজাগাঁও গ্রামের মো. শান্ত ও একই উপজেলার তড়িয়া ইউনিয়নের কাটালী গ্রামের মো. নাঈম এখলাস রাজশাহী মেডিকেল কলেজে, সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের জমাদারপাড়া গ্রামের মো. সাকিব হাসান সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে আর দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ এলাকার ক্ষিতিশ চন্দ্র রায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
অভাব-অনটনে বেঁচে থাকার কঠিন সংগ্রামে জয়ী সাকিব-ক্ষিতিশদের জীবনের গল্প একই সুতোয় গাঁথা। তাঁদের কারও বাবা ভ্যানচালক, কারও বাবা কৃষি শ্রমিক। তাঁদের পরিবারে ভিটেবাড়ি ছাড়া কোনো জায়গা-জমি নেই। কুঁড়েঘরেই বসবাস তাঁদের।
ক্ষিতিশ চন্দ্র রায় অষ্টম শ্রেণির পর থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেতে কাজ করেন। ১৩ বছর বয়সেই কৃষি শ্রমিক হিসেবে বাবার সঙ্গে বিভিন্ন জেলায় যান অন্যের খেতে ধান কাটার জন্য।
ক্ষিতিশের বাবা সুবাস চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার ছেলে ছোটকাল থেকেই কাজ করে। ধান কাটতে পারে বিঘার পর বিঘা। সে আমার সঙ্গে কৃষি শ্রমিক হিসেবে নওগাঁয় গিয়েছিল অন্যের জমিতে ধান কাটতে। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাপ-বেটা মিলে নোয়াখালীও গিয়েছিলাম ধানকাটা শ্রমিক হিসেবে।’
নাঈম, শান্ত আর সাকিবের জীবনের গল্পও একই রকম। তাঁদের তিনজনের পরিবারে অভাব-অনটন লেগে থাকত। অভাব-অনটনের বাধা জয় করে চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ পাওয়া তাঁদের অভিভাবকেরা ভর্তিসহ মেডিকেল কলেজে খেলাপড়ার খরচ বহনে অক্ষম।
তাঁদের জীবনসংগ্রামে সফল হওয়ার গল্প শুনে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বুকে জড়িয়ে সাহস জুগিয়েছেন। ভর্তির জন্য প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়ে পড়ালেখার খরচেও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে পরবর্তী সময়ে এমন সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে জেলা প্রশাসক প্রত্যেককে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের নম্বর দেন। শুভেচ্ছা জানানোর সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব দীপঙ্কর রায়, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘পঞ্চগড় থেকে ১৭ মেধাবী শিক্ষার্থী এবার দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকে আমাদের জন্য রত্ন।’