সাফ জয়ের পর যে গতিতে এগোনোর কথা ছিল, বাংলাদেশের নারী ফুটবল পিছিয়েছে তার চেয়ে বেশি। ফুটবল ফেডারেশনের গাফিলতি, দীর্ঘদিনের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের পদত্যাগ, পরীক্ষিত ফুটবলারদের অবসর আর নিয়মিত খেলার মধ্যে থাকতে না পারার মতো নানা কাণ্ডে মেয়েদের ফুটবল ২০২৩ সালে পার করেছে টালমাটাল এক বছর। বিতর্কিত এমন একটা বছরের শেষটা রঙিন হতে পারে—সাবিনা খাতুনরা আজ সিঙ্গাপুরকে হারিয়ে দিতে পারলে।
দুই দিন আগেই কমলাপুরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে র্যাঙ্কিংয়ে ১২ ধাপ এগিয়ে থাকা সিঙ্গাপুরকে প্রথম ম্যাচে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে সাফজয়ী বাংলাদেশের এটিই প্রথম জয়! গত শুক্রবারের ম্যাচটির আগে নারী দল এশিয়ান গেমসসহ ম্যাচ খেলেছিল পাঁচটি—হেরেছে দুটিতে, ড্র তিন ম্যাচে। অথচ বছরে ম্যাচের সংখ্যা বাড়ার কথা ছিল, জয়টা আসতে পারত বছরের শুরুতে। ফেডারেশনের অদূরদর্শিতায় খেলতে না পারার আক্ষেপ বছরজুড়েই করেছেন নারী ফুটবলাররা। সব বিতর্কে আপাতত বিরতি পড়েছে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জয়ে। নারী ফুটবলারদের পায়ে বিল্ডআপ ফুটবলের ছোঁয়া দেখে প্রশংসাও কম নয়। সব মিলিয়ে আজ বেলা ৩টায় শুরু হওয়া ম্যাচটিতে সাবিনাদের কাছে দর্শকদের চাওয়া—আরেকটি জয়।
লাল-সবুজ নারী দলেরও চাওয়া—বছরটা শেষ হোক ভালোভাবে। এই জয়টা খারাপ সময়ের স্মৃতি অনেকখানি ভুলিয়ে দেবে, এমনটা বলছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুনও, ‘জয়টা অবশ্যই দরকার। যেহেতু শক্তিশালী প্রতিপক্ষ থাকার কারণে এশিয়ান গেমস ভালো হয়নি। আমরাও চাই বছর ভালোভাবে শেষ করতে। তবে জয়ের চেয়ে বেশি দরকার ম্যাচ।’
গোলাম রব্বানী ছোটন দায়িত্ব ছাড়ার পর সাময়িক সময়ের জন্য নারী ফুটবলের হাল ধরেছিলেন সাইফুল বারী টিটু। তাঁর অধীনে এশিয়ান গেমসসহ ছয় ম্যাচে মাত্র একটিতে জিতেছে বাংলাদেশ দল। আজ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ দিয়ে শেষ হবে নারী ফুটবলে টিটু যুগ। দায়িত্ব ছাড়ার আগে জয়টা চাচ্ছেন তিনিও। তবে দ্বিতীয় ম্যাচটা যে কঠিন হবে, সেটাও মনে করিয়ে দিলেন টিটু, ‘ভালো খেলাটাই হবে আসল চ্যালেঞ্জ। ম্যাচ কঠিন হবে। মেয়েদের বলেছি চাপ না নিয়ে স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে। আপনি যখন ভালো খেলবেন, তখন এটা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জের। মেয়েদের বলেছি, চ্যালেঞ্জ নাও। কোচ যাবে আসবে, কিন্তু মেয়েরা থাকবে। ওদের কাজ পারফর্ম করা।’
বাংলাদেশের কাজ কঠিন করতে সিঙ্গাপুর দল উড়িয়ে এনেছে জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে খেলা ফরোয়ার্ড দানিয়েলে ট্যান লিকে। প্রথম ম্যাচে ছিলেন না ১৯ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। বুন্দেসলিগায় খেলা একজন ফরোয়ার্ড বাংলাদেশকে কতটা পরীক্ষায় ফেলতে পারেন, সেই নিয়ে জল্পনা-কল্পনা আছে। সাবিনাই যেমন বললেন, ‘তাঁর সঙ্গে খানিকক্ষণ কথা হয়েছে হোটেলের ডিনার পার্টিতে। আমি নিজে থেকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি, তবে তাঁর কথাবার্তায় জার্মানির প্রসঙ্গ বেশ কয়েকবার এসেছে। তাঁর সম্পর্কে আলাদা করে যা জেনেছি, তাতে মনে হলো, যথেষ্ট ভালো খেলোয়াড়।’ দানিয়েলেকে নিয়ে অবশ্য আলাদা কিছু বলার সুযোগ দেননি সিঙ্গাপুর কোচ করিম বেনশরিফা। শুধু একটা লক্ষ্যের কথাই জানালেন—প্রথম ম্যাচের ভুল শুধরে বাংলাদেশকে আরও চাপে ফেলার। তিনি বললেন, ‘আগের ম্যাচে অনেক ভুল করেছি আমরা। বাংলাদেশ দলের শক্তিমত্তাও বুঝেছি। সেগুলো শুধরে নিয়ে ভালো ম্যাচের আশা করছি।’