সাহিদ রহমান অরিন, ঢাকা
শেন ওয়ার্ন-ব্রেট লিরা তো পারলে ডেভিড ওয়ার্নার-মিচেল মার্শকে নিয়ে বাজি ধরেন! ওয়ার্নার-মার্শ নিজেরাও বোধ হয় নিজেদের নিয়ে এতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না, যতটা আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়েছিল দুই পূর্বসূরির মুখ থেকে।
ক্রিকেট জ্যোতিষীদের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও রাখা যেতে পারে ওয়ার্ন-লিকে। টানা পাঁচটি সিরিজ হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া অস্ট্রেলিয়াকেই শুরু থেকে ফেবারিট বলে এসেছেন দুজন। অজিদের বিশ্বজয়ের নায়ক হবেন ওয়ার্নার, ওপরে উঠে এসে ভালো করবেন মার্শ; সেটিও বলেছেন জোর গলায়।
একটা জায়গায় অবশ্য ওয়ার্নকে এগিয়ে রাখতেই হয়। দুবাইয়ে গত রাতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালের আগে লেগ স্পিন কিংবদন্তির ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, অস্ট্রেলিয়া পরে ব্যাট করবে ও প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা জিতবে। এবার সব মিলিয়ে দেখুন। একদম ‘খাপে খাপ’!
অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ পোডিয়ামে উঠে ট্রফিটা বুঝে নিতেই ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম দলটির একমাত্র আক্ষেপ ঘুচে গেছে। এর আগে ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠেছে মার্শের হাতে। আর আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮৯ করে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন ওয়ার্নার।
অথচ এই ওয়ার্নার মাস দেড়েক আগেও তিক্ত সময় পার করেছেন। বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত এ বছর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টি-টোয়েন্টি না খেললেও সর্বশেষ চার ম্যাচের তিনটিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছিলেন। তবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলতে গিয়ে যেন তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। ফর্ম হারানোর সঙ্গে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অধিনায়কত্বও হারান ওয়ার্নার। একসময় বাদ পড়ে যান দল থেকেও। আইপিএলের শেষ দিকে তাঁকে নাকি ড্রেসিংরুমেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি—এমনটাও শোনা যায়।
সেই ওয়ার্নারই ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে কী দারুণভাবেই না ঘুরে দাঁড়ালেন! সবকিছুর জবাব দিলেন ব্যাট হাতে। পূর্বসূরি ওয়ার্ন-লির বাজির ঘোড়া হয়ে জিতে নিলেন বিশ্বকাপ সেরার খেতাব।
কাল পুরস্কার নিতে এসে চ্যালেঞ্জ জয়ের কথাগুলোই বললেন ওয়ার্নার, ‘বিশ্বকাপটা আমার জন্য ছিল নিজের উৎসে ফিরে যাওয়ার, পরিশ্রম করে যাওয়ার। ফাইনালের চাপ ছিল। কিন্তু ছেলেরা দুর্দান্ত খেলেছে।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর আগেও একবার ফাইনাল খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল অজিরা। কাল ফেলে আসা অতীতকেও স্মরণ করলেন ওয়ার্নার, ‘এক দশক আগে ইংল্যান্ডের কাছে হারটা বেদনার ছিল। তখনো আমাদের দলটা দুর্দান্ত ছিল।’
ফাইনালের নায়ক মিচেল মার্শই বা কম কিসে! বিখ্যাত বাবার ‘অখ্যাত’ ছেলেদের কাতারে নিজেকে কখনোই দেখতে চাননি। বাবা জিওফ মার্শ জিতেছেন দুটি বিশ্বকাপ। ১৯৮৭ সালে খেলোয়াড় আর ১৯৯৯ সালে কোচ হিসেবে। ছেলে মিচেল তো যেন এখনই তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে চাইছেন! ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর এবার জিতলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
অথচ লাগাতার চোট আর ধারাবাহিকতার অভাবে বাতিলের খাতায় নামটা প্রায় তুলেই ফেলেছিলেন মিচেল মার্শ। তবে ওয়ার্নের দাবি ছিল, অজি ম্যানেজমেন্ট মার্শকে লোয়ার মিডল অর্ডারে খেলিয়ে তার প্রতিভাকে অবমূল্যায়ন করছে। স্টিভেন স্মিথকে সরিয়ে মার্শকে তিনে ব্যাট করতে পাঠানোর পরামর্শটা দিয়েছিলেন ওয়ার্নই। অজি গ্রেটের কথা আমলে নিয়ে মার্শকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে তিনে নামাতে শুরু করে ম্যানেজমেন্ট। বাংলাদেশ সফরেও একই পজিশনে সফল ছিলেন মার্শ। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন বিশ্বকাপেও।
ওয়ার্নার-মার্শের সৌজন্যেই ফিঞ্চ-স্মিথের অফ ফর্মটা ঢাকা পড়ে গেছে। অবশ্য যে দলে ইস্পাতদৃঢ় মনোবলের ওয়ার্নার-মার্শ আছেন, সে দলের আর কী লাগে!