নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালে দুই দিন আগে ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে ১২ বছর বয়সী নিপা আক্তার। একইদিন ভর্তি হন নাসিমা আক্তার (২৬)। তাদের দুজনের বাসা নগরের হালিশহর এলাকায়। তারা না ফুটিয়ে সরাসরি ওয়াসার লাইনের পানি খেতেন। এই হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৫০ জনের মধ্যে ২০-২৫ জনের বাসা হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকায়।
এদের বেশির ভাগেরই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ পানি। বাইরের খাবার খেয়েও কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন। আবার কারও কারও আক্রান্ত হওয়ার কারণ অজানা।
চট্টগ্রামে করোনা শূন্যের কোটায় নেমে গেলেও প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চাপ। বর্তমানে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ছাড়াও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৫১, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ছয়, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ১৮ এবং উপজেলার হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৯১ জন।
মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি থাকা হালিশহর বি-ব্লক এলাকায় থাকেন নাসিমা আক্তার। তিনি পোশাকশ্রমিক। নাসিমা বলেন, পানি ফুটিয়ে পান করিনি। আমরা ওয়াসার লাইনের পানি খাই। এ ছাড়া দুপুরে কাজের ফাঁকে বাইরের খাবার এনে খেতাম।
১২ বছর বয়সী নিপা আক্তারের মা নার্গিস আক্তার বলেন, তিন দিন আগে থেকে মেয়ের ডায়রিয়া। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন স্যালাইন চলছে। আগে থেকে ভালো লাগছে নিপার। তিনি বলেন, আমরা সাধারণত পানি কিনে খাই। প্রতি সপ্তাহে দুই ড্রাম পানি দিয়ে যায়। ওই পানি আমরা খাই। ফুটিয়ে পান করতাম না।
হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম আজাদ বলেন, ভর্তি থাকা প্রায় ৫০ জনের মধ্যে ৪০ জনই শিশু। বাকিরা নারী। এদের বেশির ভাগই আক্রান্ত হয়েছে বিশুদ্ধ পানি পান না করার কারণে।
সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই পানি অথবা বাইরের খাবার খাওয়ার কারণে। কিছু কিছু রোগী পেয়েছেন, যাদের আক্রান্ত হওয়ার কারণ অজানা। অন্য বছরের তুলনায় এ সময়ে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তারা। তবে এ পর্যন্ত কারও মৃত্যু হয়নি। যথাযথ চিকিৎসায় দুই তিন দিনের মধ্যে ভালো হয়ে বাসায় ফিরছেন রোগীরা।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া বলেন, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, হাটহাজারীসহ চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৯১ জন ডায়রিয়া রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি মাসে তিন দিনে ২৮৪ জন আক্রান্ত হয়েছে, আর সুস্থ হয়েছে ৭৬ জন।
সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, মূলত গরম বাড়ার কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশুদ্ধ পানি বেশি বেশি পান করতে হবে। ডায়রিয়া হলে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসায় ১৫টি উপজেলায় ২৮৪টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। আক্রান্তদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইন মজুত রয়েছে।