কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টসপল্লি উপমহাদেশের একটি বৃহৎ তৈরি পোশাক শিল্প এলাকা। কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টসপল্লি খ্যাত এই তৈরি পোশাক শিল্প এলাকায় ৬ হাজারের বেশি ছোট-বড় কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৮ লাখ শ্রমিক। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ উপজেলার শুভাঢ্যা ও আগানগর ইউনিয়নে শোরুম রয়েছে প্রায় ১০ হাজারের বেশি। কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাক রপ্তানি না হলেও সারা দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে খুব ভালোভাবেই। এখানকার ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশের তৈরি পোশাকের ৬০ ভাগ চাহিদা মেটায় কেরানীগঞ্জের এই গার্মেন্টস পল্লি।
কিন্তু গত দুই বছর ধরে চলমান করোনার তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টসপল্লির ব্যবসায়ীরা। উৎপাদনমুখী এ শিল্প অনেক লড়াই সংগ্রাম করে গেল কয়েক মাস ধরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। আগামী ঈদুল ফিতরের মৌসুমকে লক্ষ্য করে টিকে থাকার লড়াইয়ে পোশাক উৎপাদনে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছে কারখানাগুলো।
উৎপাদন স্বাভাবিক হলেও বেচাকেনা স্বাভাবিক না হওয়ায় বেশ উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত গার্মেন্টস পল্লির ব্যবসায়ীরা। করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন তাঁদের উদ্বেগ আর চিন্তার কারণ আরও বেশি জোরালো করেছে। ওমিক্রন যেন কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লির ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।
নুরু মার্কেটের একতা প্যান্ট ফেয়ারের মালিক মো. ফয়সাল বলেন, ‘গত দুই বছরে করোনার ধাক্কায় আমরা দিশেহারা। করোনার কারণে আমরা পুঁজি হারাতে বসেছি। অনেক সাহস করে ঝুঁকি নিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে চলতি বছরে আবারও ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেছি। গত কয়েক মাস ধরে কারখানায় ঠিকঠাক মতোই কাজ চলছে। তবে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে শঙ্কায় আছি। ঈদের আগে আবারও কঠোর বিধিনিষেধ আসলে আমাদের এবার পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’
মেসার্স মমতা গার্মেন্টসের মালিক জামাল উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আমদানিনির্ভর ব্যবসা করি। এদিকে করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা দেশের বাইরে যেতে পারছি না। এদিকে পণ্যের দাম, ট্যাক্স প্রসেসিং ফি সব বেড়ে গেছে। গত দুই বছরে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটা তুলতেই আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’
জামাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘সরকারের প্রতি আমাদের দাবি, জরুরি প্রয়োজনে লকডাউন দেওয়ার প্রয়োজন হলেও কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লি লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হোক।’
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টসপল্লির আরেক ব্যবসায়ী মো. ইয়াছিন বলেন, ‘আমি গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে কাপড় সরবরাহ করি। কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস এলাকায় অনেক ব্যবসায়ীর কাছে আমার পাওনা টাকা পড়ে আছে। ঈদের সময় বেচাকেনা করে টাকা পরিশোধ করার শর্তে অনেককে বাকিতে কাপড় দিয়েছি। এখন খুব চিন্তায় আছি, যদি ঈদের আগে লকডাউন পড়ে যায় তবে টাকাগুলো ফেরত পাব না।’
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি স্বাধীন শেখ বলেন, ‘করোনায় কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টসপল্লির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে পথে বসে গেছে। তবে ব্যবসায়ীদের চেষ্টায় আমরা এটা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিলাম। মার্চ-এপ্রিলে ওমিক্রন বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে শুনে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’