ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ও রাজশাহী শাখা প্রধান আব্দুল মোত্তালিবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত রোববার আইসিবির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামাল হোসেন গাজী এক অফিস আদেশে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন।
ডিজিএম আব্দুল মোত্তালিব সম্প্রতি অর্জিত ছুটি (ইএল) নিয়ে জেলে গিয়েছিলেন। দুর্নীতির মামলায় তিনি জেলে গেলেও গোপন রেখেছিলেন বিষয়টি। এ নিয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় ‘অর্জিত ছুটি নিয়ে কারাগারে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
জানতে চাইলে ২৬ ডিসেম্বর আব্দুল মোত্তালিব বলেছিলেন, এটি তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। কোনো অসুবিধা দেখলে পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থা নেবে। সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে কথা বলার জন্য গত রোববার রাতে ফোন করা হলে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশের কপিটি পাওয়া গেছে।
কপিতে বলা হয়, ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এ সময় তিনি শুধু খোরাকি ভাতা পাবেন। আদেশে আব্দুল মোত্তালিবকে আইসিবির প্রধান কার্যালয়ের ডিসিপ্লিন, প্রিভেন্স ও আপিল বিভাগে অবিলম্বে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কানোপাড়া সাজুরিয়া গ্রামের মৎস্যচাষি আব্দুল বারিক মণ্ডলের নামে ২০১১ সালে আইসিবি থেকে ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছিল। তবে নথিপত্র জাল করে প্রথম কিস্তির ২৭ লাখ টাকা তুলে নেন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার মঙ্গলপাড়া গোবিন্দপাড়া গ্রামের গোলাম মোর্শেদ হক। এ কাজে সহায়তার অভিযোগ ওঠে আইসিবির রাজশাহী শাখা প্রধান আব্দুল মোত্তালিব ও প্রধান কার্যালয়ের এজিএম আহম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তিনজনের নামে মামলা করেন বারিক।
মামলাটি তদন্ত করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম। তিনি ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেন। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পলাতক থাকেন মোত্তালিব। অবশেষে মামলার নির্ধারিত দিন গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি রাজশাহী বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। ২৮ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত তাঁকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হন।
আব্দুল মোত্তালিব যেদিন কারাগারে যান, সেদিনও তিনি হাজিরা খাতায় সই করেছেন। দিনটি ছিল ১৬ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার। পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি। আব্দুল মোত্তালিব ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ দিনের অর্জিত ছুটির আবেদন দেন। ১৪ সেপ্টেম্বর এ আবেদন দেন তিনি। ছুটির আবেদনে পৈতৃক জমিজমা ভাগ-বাঁটোয়ারা, খাজনা পরিশোধ, সীমানাপ্রাচীর নির্মাণসহ পারিবারিক কাজে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
মোত্তালিব যেদিন জেলে যান, সেদিন থেকেই তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে জেল থেকে বের হওয়ার পর তিনি দিব্যি অফিস করছিলেন। জেলে যাওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানতেও দেননি।