এম আসাদুজ্জামান সাদ, গাজীপুর
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা ধানের জিন পরিবর্তনের মাধ্যমে ধানের গুণগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন ও ধানের মধ্যে পোকা প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরিতে সফল হয়েছেন। তাঁদের এ সফলতার ফলে এখন এ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে যেকোনো ধান সুগন্ধি ছড়াবে। শুধু তাই নয়, ধানের বড় শত্রু মাজরা পোকা ও বাদামি ঘাসফড়িং (কারেন্ট পোকা) প্রতিরোধ করতে পারবে।
ব্রির বিজ্ঞানীদের এই সফলতার মূলে রয়েছে ‘ক্রিসপার ক্যাস-৯’ পদ্ধতির ব্যবহার। এটি মূলত একটি জিনোম এডিটিং টুলস বা ফসলের জিন পরিবর্তনের আধুনিক ও সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য একটি প্রযুক্তি।
ব্রির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সব ধানেই সুগন্ধি বৈশিষ্ট্য আছে। কিন্তু টুএপি (২-এসিটাইল, ১-পাইরোলিন) সক্রিয় থাকলে সুগন্ধি বৈশিষ্ট্য প্রকাশ হতে পারে না। ধানে বিএডিএইচটু জিন সক্রিয় থাকলে এটি টুএপি উৎপাদন ব্যাহত করে। ক্রিসপার ক্যাস-৯ পদ্ধতিতে টুএপি জিনটি নিষ্ক্রিয় করে অধিক ফলনশীল যেকোনো ধানের জাতে সুগন্ধি বৈশিষ্ট্য যোগ করা যায়।
একই পদ্ধতিতে ধানগাছে সেরোটোনিন উৎপাদন ব্যাহত করে ধানের প্রধান অনিষ্টকারী পোকা বাদামি ঘাসফড়িং ও মাজরা পোকা প্রতিরোধী ধানের জাত উৎপাদন করা যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কীটতত্ত্ববিদ ড. মো. পান্না আলীর নেতৃত্বে একদল গবেষক ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য সন্নিবেশ করে ধানের ২৪টি গাছ পেয়েছেন।
তাঁরা জানান, এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ২০২০ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান জার্মানির বিজ্ঞানী ইমান্যুয়েল চার্পেনিয়ার ও আমেরিকার জেনিফার দোদনা। এরপর থেকেই ফসলের জাত উন্নয়নে কৃষিবিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি। আর তখন থেকেই ড. মো. পান্না আলীর নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
ড. মো. পান্না আলী, ‘দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী ২৪টি গাছ পেয়েছি। ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে গাছগুলো পাওয়া গেছে, সে ধানের শিষগুলো পাকতে শুরু করেছে। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে বীজ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। এ সফলতায় আমরা দারুণ আনন্দিত ও উজ্জীবিত।’
সম্প্রতি এ ২৪টি গাছ পরিদর্শন করেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ব্রি উচ্চ ফলনশীলসহ বিভিন্ন প্রকার ধানের ১০৬টি জাত উদ্ভাবন করেছে। ক্রিসপার ক্যাস-৯ পদ্ধতি ব্যবহার বাংলাদেশের জন্য মাইলফলক। মুজিববর্ষে এসে তাদের সফলতার ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে জিন পরিবর্তনের মাধ্যমে সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী ধানের জাত।’
ব্রির মহাপরিচালক বলেন, ‘এটি ব্রির একটি যুগান্তকারী সফলতা। এ পদ্ধতির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আমরা যেকোনো কাঙ্ক্ষিত গুণাগুণ শুধু ধান নয়, অন্য যেকোনো ফসলেও যোগ করতে পারব।’