দিনাজপুরে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। করোনার দুই বছরের স্থবিরতা কাটিয়ে এ বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় রমজানের শুরু থেকেই বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। আর ঈদ যতই কাছে আসছে, ক্রেতা ততই বাড়ছে। তবে দ্রব্যমূল্যের কারণে ক্রেতাদের ভেতরে অসন্তোষ থাকলেও বেচাকেনায় খুশি ব্যবসায়ীরা।
শহরের বাহাদুর বাজারের আব্দুর রহিম সুপার মার্কেট ও জাবেদ সুপার মার্কেট; গণেশতলার গুলশান মার্কেট ও লুৎফুন্নেসা টাওয়ার এবং মালদহপট্টির বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ক্রেতারা ভিড় করছেন। শিশুদের পাশাপাশি নারীদের কাপড়ের চাহিদাই বেশি। এবারের ঈদে বেশি বিক্রি হচ্ছে পুষ্পা শাড়ি, থ্রিপিস ও পাঞ্জাবি। তবে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে দেশি কাপড়।
বাজারে এবার একটি দেশি থ্রিপিস ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, জর্জেট থ্রিপিস ৮০০ থেকে ৩ হাজার, লেহেঙ্গা ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার, দেশি সুতি টাঙ্গাইল শাড়ি ৬৫০ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে ভালো চাহিদা রয়েছে শারারা ও গারারা থ্রিপিসের। এগুলো বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৬০০ থেকে ১০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে মটকা ৬ হাজার টাকা, সিল্ক ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার, অ্যান্ডি কটন/অ্যান্ডি সিল্ক ৬ হাজার, রাজশাহী সিল্ক ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাহাদুর বাজারের তামান্না জামদানি হাউসের স্বত্বাধিকারী শাহানাজ বেগম বলেন, ‘দুই বছর করোনার কারণে কোনো ব্যবসা হয়নি। এবার রমজানের শুরু থেকেই ক্রেতারা আসছেন। বেচাবিক্রিও ভালো। তবে এবার ভারতীয় কাপড়ের তুলনায় দেশীয় কাপড়ের চাহিদা বেশি।’
রেশমা পাঞ্জাবি হাউসের স্বত্বাধিকারী মো. লিটন বলেন, ‘করোনার রেশ কাটিয়ে এবার রমজানের শুরু থেকে ক্রেতারা আসছেন, বিক্রিও মোটামুটি ভালো।’
বীরগঞ্জ থেকে কেনাকাটা করতে দিনাজপুরে এসেছেন জয়নব ইসলাম। বাজার ঘুরে স্বামী, সন্তান আর আত্মীয়স্বজনের জন্য কেনাকাটা করলেন। নিজের জন্য একটি লেহেঙ্গা নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। তাই ইচ্ছে থাকলেও মনমতো কেনাকাটা করতে পারছি না। অনেক কিছুই তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়েছে।’
শহরের রামনগরের বাসিন্দা আবু তালেব এসেছেন পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে। গণেশতলায় একটি ছোট্ট ব্যবসা করেন তিনি। প্রতিবছর স্ত্রী-সন্তান আর মা-বাবার পাশাপাশি ভাইবোনের বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করেন। গত দুই বছর কোনোমতে চালিয়ে নিয়েছেন। তাই এবার সবাইকে কাপড় দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু গত দুই বছরের ব্যবসার ঘাটতি, সেই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কোনোভাবেই হিসাব মিলছে না। অনেককে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী এবার কিছু নেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাসাভাড়া, চাল, ডাল, তেল, সবজি—সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। কিন্তু আয় না বেড়ে উল্টো কমছে। তাই ঈদের কেনাকাটায় কাটছাঁট করা লাগছে।’
এদিকে কাপড়ের দোকানে ভিড় বাড়লেও তেমন একটা ভিড় নেই কসমেটিকসের দোকানগুলোতে। গত দুই বছরের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে এবার ব্যবসায়ীরা প্রসাধনসামগ্রীর পসরা সাজালেও সে অনুপাতে ক্রেতা নেই।
মালদহপট্টির কসমেটিকস ব্যবসায়ী স্বপ্ন প্রসাধনীর স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন বলেন, ‘মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে শখের বশে প্রসাধনী কেনেন। এবার ভালো ব্যবসা হবে আশায় আমরা প্রচুর পরিমাণে প্রসাধনী স্টক করেছি। কিন্তু সে অনুপাতে বিক্রি নেই। আমার মনে হয়, বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম, তার প্রভাব আমাদের ব্যবসায়ও পড়েছে।