শামিমুজ্জামান, খুলনা
খুলনা অঞ্চলে ভাইরাসে আক্রান্ত রেণু, সনাতন পদ্ধতিতে চাষ ও পানিসংকটের কারণে পাঁচ বছর ধরে কমছে চিংড়ির উৎপাদন। এতে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগে মৎস্য অধিদপ্তরকে সক্রিয় হওয়ার দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।
জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে খুলনা থেকে চিংড়ি উৎপাদন ছিল ২৭ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে চিংড়ি উৎপাদিত হয় ২৫ হাজার ১২২ মেট্রিক টন। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা—তিন জেলা থেকে গত অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ৩৩ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন; যা তার আগের অর্থবছরের থেকে ৫০০ মেট্রিক টন কম।
চাষিরা বলছেন, সনাতন পদ্ধতিতে চাষ, রোগমুক্ত রেণু না পাওয়া, উন্নত প্রশিক্ষণের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে চিংড়ি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে খুলনার দাকোপের চিংড়িচাষি আবদুর রহমান বলেন, জীবাণুমুক্ত রেণু না থাকায় প্রতিবছর অসংখ্য চিংড়ি ভাইরাসে মারা যায়। এ ছাড়া মৌসুমের শুরুতে দেখা দেয় পানিসংকট; যা চিংড়ি চাষে সবচেয়ে বড় বাধা।
অপর দিকে চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি রকিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় এ বছর ৫৯ হাজার ৩২২টি খামারে মোট ৩১ হাজার ১৩৫ হেক্টর ঘেরে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। তবে প্রতিবছরের মতো এবারও জীবাণুমুক্ত রেণুর সংকটে চিংড়ির ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মৌসুমের শুরুতে পানিসংকটের সমস্যাও রয়েছে। চাষিদের প্রশিক্ষণ না থাকায় প্রতিবছরই তাঁদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
রকিকুল ইসলাম চিংড়িশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আধুনিক প্রশিক্ষণ, উন্নত রেণু সরবরাহের লক্ষ্যে হ্যাচারি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সহজ শর্তে চাষিদের ঋণ দেওয়ার দাবি জানান। এদিকে রপ্তানিকারকেরা বলছেন, চিংড়ির যেমন উৎপাদন কমেছে, তেমনি কমেছে রপ্তানি। উৎপাদন ও রপ্তানি কমে গেলে কারখানা বন্ধ হবে এবং বেকারত্ব বেড়ে যাবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি হুমায়ূন কবির বলেন, চিংড়ির উৎপাদন যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে রপ্তানিও। এর মধ্যে করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির চাহিদাও কমেছে; যা এ শিল্পের জন্য অশনিসংকেত। এভাবে রপ্তানি কমলে ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। বেকার হবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখো মানুষ।
হুমায়ূন কবির আরও বলেন, চিংড়িশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে যুগোপযোগী চিন্তা করতে হবে। বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী চিংড়ি উৎপাদন করতে হবে। আর এ জন্য এখনই সরকারের দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসতে হবে।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল চিংড়ি উৎপাদন হ্রাসের কথা স্বীকার করে বলেন, চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য বিভাগ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে চিংড়িচাষিদের প্রশিক্ষণ, পানি সরবরাহ নিশ্চিত, জীবাণুমুক্ত রেণু সরবরাহের পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা।