পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষে নির্মাণ করা হচ্ছে অ্যাগ্রো ফুড কারখানা। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় কারখানা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকেরা বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি দিয়েছেন। তবে কারখানাটি নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র থাকলেও বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে জানান এক কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লোকালয়ে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসংলগ্ন শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া ছাড়পত্র সম্পূর্ণ বেআইনি। এতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকবে এবং শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে।’
কারখানার মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কারখানার নির্মাণকাজ শুরুর আগে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে আপত্তি থাকলে জানাতে বলা হয়েছিল। পরিবেশ অধিদপ্তর স্কুল কর্তৃপক্ষকে ডাকলেও তাঁরা উপস্থিত হয়ে আপত্তি জানাননি। আপত্তি না থাকার কারণেই পরিবেশ অধিদপ্তর কারখানা নির্মাণের ছাড়পত্র দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে কারখানাটি স্থাপন করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হবে না এবং এলাকার পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হবে না। একটি স্বার্থান্বেষী মহল কারখানার নির্মাণ বাধাগ্রস্ত করার জন্য স্থানীয়দের উসকানি দিচ্ছে।’
জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে ‘ধলেশ্বরী এগ্রো ফুড মিলস’ নামে কারখানাটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কারখানাটির পাশেই রয়েছে আঠারোদানা বাদেপারশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কারখানায় প্রতিদিন ৭০ টন করে চাল উৎপাদন করা হবে। এটি চালু হলে এর ধুলাবালু, ছাই ও চালের কুঁড়া বাতাসে উড়ে স্কুলসহ আশপাশের বাড়িঘরে ছড়িয়ে পড়বে। প্রচণ্ড শব্দ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া এই কারখানায় বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কাজ করবেন, যারা বিদ্যালয় এলাকায় চলাফেরা করবেন। ফলে একদিকে যেমন বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে, অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়বে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের দেয়াল ঘেঁষে কারখানাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে স্কুলে ১৮০ জন শিক্ষার্থী আছে। কারখানার হলে অনেক অভিভাবক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী সরিয়ে নেবেন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’
আঠারোদানা গ্রামের আনোয়ারুল কবির (৪৫) নামের অভিভাবক বলেন, ‘শিশুদের পড়াশোনর জন্য নিরিবিলি পরিবেশ দরকার। কারখানাটি স্থাপিত হলে সেই পরিবেশ আর থাকবে না।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক জিয়াউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তিনবার শুনানি হয়েছে। শুনানিতে কারখানার মালিকপক্ষ উপস্থিত থাকলেও অন্যপক্ষ উপস্থিত হয়নি। আপত্তি না থাকার কারণেই কারখানাটি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ আছে।’
ইউএনও মুনিয়া চৌধুরী বলেন, ‘কারখানাটির নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমোদন দিয়েছে। এলাকাবাসীর দেওয়া আবেদনের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।’