হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে গোবিন্দপুর ইউনিয়নে গাঙ্গাটিয়া জমিদারবাড়ি অবস্থিত। পুরোনো এই জমিদারবাড়িটির গোড়াপত্তন ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুর দিকে। এটির প্রতিষ্ঠাতা ভোলানাথ চক্রবর্তী। এখনো বাড়িটি পুরোপুরি টিকে আছে স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন হয়ে। তবে অন্য জমিদারবাড়ির সঙ্গে এটির পার্থক্য হলো—জমিদারের বংশধরেরা এখনো বাড়িটিতে বসবাস করছেন।
বাড়িটি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন বয়ে বেড়াচ্ছে। জমিদারবাড়ির ভেতরের অট্টালিকা চমৎকার কারুকাজে ভরা। তবে বাইরের অংশ জরাজীর্ণ। এখানকার বিশেষ স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে উল্লেখযোগ্য হলো জমিদারবাড়ির নহবতখানা, দরবার গৃহ ও একটি মন্দির। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার এই বাড়িটি দেখতে পর্যটকেরা ভিড় করেন। এ ছাড়া প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাড়িটি দেখতে পর্যটকেরা আসেন।
জমিদারবাড়িটির বর্তমান বংশধর হচ্ছেন মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী চৌধুরী। তিনি একাই এই বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। তার ভাই তপন চক্রবর্তী কয়েক বছর আগে মারা যান। বর্তমানে এই জমিদারবাড়িটি মানব বাবুর বাড়ি নামেই বেশ পরিচিত। তাঁরা ছিলেন ব্রাহ্মণ। এই জমিদারের বংশধরেরা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত।
এখানকার জমিদারদের আদি নিবাস ছিল ভারতের কাইন্নকব্জিতে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এ পরিবারের দীননাথ চক্রবর্তী হোসেনশাহি পরগনার অংশবিশেষ নীলকর ওয়াইজের কাছ থেকে ক্রয় করে এ পরিবারের প্রথম জমিদারি প্রথার সূচনা করেন। এর কিছুকাল পর অতুলচন্দ্র চক্রবর্তী ‘পত্তনি’ সূত্রে আঠার বাড়ির জমিদার জ্ঞানদা সুন্দরী চৌধুরাণীর কাছ থেকে দুই আনা-অংশ গাঙ্গাটিয়া জমিদারবাড়ির অন্তর্ভুক্ত করেন। ব্রিটিশ শাসনামলের শুরু থেকেই তাঁদের জমিদারি শুরু হয় এবং দেশভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে তাঁদের জমিদারিও শেষ হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এই বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। আর এ খবর জানতে পেরে দেশীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই জমিদারবাড়িতে হামলা চালায়। মানবেন্দ্র চক্রবর্তীর বাবা ভূপতি চক্রবর্তীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের তাঁরা নির্মমভাবে হত্যা করে। পাকিস্তানি বাহিনী যে জায়গায় ভূপতি চক্রবর্তীকে হত্যা করেছে, বর্তমানে সেখানে একটি সমাধি তৈরি করা হয়েছে।