উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটের প্রস্তুতি পর্বের সূচনা হয়েছিল ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে। একই বছরের ৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে পল্টন ময়দানের জনসভা থেকে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গভর্নর হাউস ঘেরাও করা হয়। এরপর তিনি ৭ ডিসেম্বর সর্বাত্মক হরতালের ডাক দেন। সেই হরতাল সর্বাত্মকভাবে পালিত হয়েছিল।
হরতাল পালনের অজুহাতে ২৯ ডিসেম্বর পুলিশ নড়াইল ও নরসিংদীর হাতিরদিয়া বাজারে গুলি করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন আসাদুজ্জামান আসাদ। পুলিশের লাঠির আঘাতে তাঁর মাথা ফেটে যায়।
দ্রুত সংবাদ পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় হাতিরদিয়ার পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারীদের মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছানোর জন্য আসাদ নিজেই আহতাবস্থায় সাইকেলে চেপে ঢাকায় আসেন।
১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রদের ১১ দফা এবং বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ১৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দেয়। মোনায়েম খান ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেন। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ ধারা ভাঙার কর্মসূচি দেয় ২০ জানুয়ারি। সেদিন দুপুরে ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখাঁরপুল এলাকায় মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান। পুলিশ তাঁদের চানখাঁরপুলে বাধা দেয়। এ সময় আসাদ ও তাঁর সহযোগীরা স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে এগোতে শুরু করেন। ওই অবস্থায় খুব কাছ থেকে আসাদকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালালে তিনি গুরুতর আহত হন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তাঁর এই আত্মবলিদান স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করে। পরবর্তী সময়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের।
আসাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হল ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। তাঁর হত্যার দিন ২০ জানুয়ারি সেই থেকে শহীদ আসাদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।