নীহাররঞ্জন রায় ছিলেন ইতিহাসবিদ, সাহিত্য সমালোচক ও শিল্পকলা গবেষক। তিনি ১৯০৩ সালের ১৪ জানুয়ারি তৎকালীন ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।
নীহাররঞ্জন প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন স্থানীয় ন্যাশনাল স্কুলে। এরপর সিলেটের মুরারীচাঁদ কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন। কিছুদিন গবেষণায় নিযুক্ত থাকার পর বৃত্তি নিয়ে ইউরোপে যান এবং হল্যান্ডের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি এবং লন্ডন থেকে গ্রন্থাগার বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন।
১৯২৭ থেকে ১৯৩৩ সালে কিছুকাল তিনি বার্মায় গিয়ে বার্মিজ মন্দির ও স্থাপত্যের ওপর গবেষণা করেন।
তিনি অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে কারাবন্দী হন এবং জেলখানায়ই ‘বাঙ্গালীর ইতিহাস’ রচনার কাজ শুরু করেন। পরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতিতে যোগ দেন। ভারতের বিপ্লবী সোশ্যালিস্ট পার্টি ও কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গেও তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তিনি আট বছর রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন।
নীহাররঞ্জনের পাণ্ডিত্য বহু ক্ষেত্রে বিচরণশীল ছিল। তাঁর ইংরেজিতে লেখা ৭০টির বেশি ও বাংলায় লেখা ৩০টি প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ভাষণ এবং ইংরেজিতে ১৫টি ও বাংলায় সাতটি গ্রন্থের বিষয়বস্তু ছিল ইতিহাস, চারুকলা, স্থাপত্য, নৃবিদ্যা, লিপিতত্ত্ব, ধর্ম, সাহিত্য, সমসাময়িক রাজনীতি, গান্ধী, নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্ম।
৩৫ বছরের বেশি সময় তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো, প্রভাষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপত্রের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মুখ্য গ্রন্থাগারিক, রিডার ও প্রফেসর ছিলেন। তিনি সুভাষ বসু পরিচালিত ইংরেজি দৈনিক লিবার্টিতে সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর লিখিত গুরুত্বপূর্ণ বই হলো—বাঙ্গালীর ইতিহাস: আদি পর্ব, রবীন্দ্রসাহিত্যের ভূমিকা, কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি, বাংলার নদ-নদী, বাঙালী হিন্দুর বর্ণভেদ, প্রাচীন বাংলার দৈনন্দিন জীবন, মুঘল কোর্ট পেইন্টিং, দ্য শিখ গুরুস অ্যান্ড দ্য শিখ সোসাইটি, ডাচ অ্যাকটিভিটিস ইন দ্য ইস্ট (সম্পাদিত), অ্যান অ্যাপ্রোচ টু ইন্ডিয়ান আর্ট ইত্যাদি।
১৯৮১ সালের ৩০ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন নীহাররঞ্জন রায়।