এইচ এম শাহনেওয়াজ
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের বাজার পুঠিয়ার বানেশ্বর এখন জমজমাট। প্রতিদিনই এখানে আসছে নানা জাতের আম। এতে বাজারের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে পাকা আমের মিষ্টি ঘ্রাণ। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে আমের কেনা-বেচা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দাবি, এ বাজারে দৈনিক কেনা-বেচা হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা আম।
শুক্রবার সকালে বানেশ্বর কলেজ মাঠে অস্থায়ী আম বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন আঁটি জাতীয় আমের সঙ্গে পুরোদমে এখন গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাত, লক্ষণ ভোগ ও ল্যাংড়া। তবে বিখ্যাত ফজলি ও আম্রপালি আম আসবে ১৫ জুন থেকে। সেই সঙ্গে উপজেলার ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে বিড়ালদহ ও শিবপুরহাট বাজারেও পুরোদমে চলছে আম কেনা–বেচা। প্রতিদিন সকাল থেকে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে বেচা–কেনা। এ দিকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে বানেশ্বর বাজার এখন গত কয়েক বছরের চেয়ে অনেক বেশি সরগরম। বর্তমানে ক্ষীরসাপাত ও গোপালভোগ আম বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকায়। ল্যাংড়া দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রকার ভেদে আঁটি জাতীয় আম বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। আর লক্ষণভোগ প্রতিমণ ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দুধস্বর, কালুয়াসহ কয়েক প্রজাতি আম দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বানেশ্বর বাজারের ইজারদার ওসমান আলী বলেন, বানেশ্বর আমের মোকাম রাজশাহীর জেলার মধ্যে সর্ববৃহৎ। প্রতিদিন পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাগমারা, বাঘা, চারঘাট ও নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা এখানে আম বিক্রি করতে আসেন। সেই সঙ্গে এখানে আম কিনতে আসেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। বাজার কমিটি ও পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারে আসা সব ক্রেতা-বিক্রেতাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
বাজারে আম বিক্রি করতে আসা চারঘাট এলাকার সাদেক আলী বলেন, ‘খরা ও ঝড়ে চাষিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার বাজারে আমের দাম ভালো। আর বানেশ্বর বাজারে দেশে বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা আসেন। তাই একটু দূরত্ব হলেও আমরা এখানে আম বিক্রি করতে আসি।’
বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বানেশ্বর আমের মোকামেহাজারো ক্রেতা-বিক্রেতা আসেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন কুরিয়ার ও পার্সেল সার্ভিস রয়েছে। আর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন শতাধিক যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকে বিভিন্ন জেলায় আম সরবরাহ করছেন। তবে অনলাইনে আমের কেনা বেচার কারণে এ বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে।’
এ ব্যাপারে বানেশ্বর বাজার বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘জেলার মধ্যে আমের জন্য বানেশ্বর বাজার বেশ জমজমাট। বর্তমানে এই বাজারে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে চার থেকে ৫ কোটি টাকার আম কেনা বেচা হয়। সেই সঙ্গে বাজারের আশপাশের ছোট দোকান ও আড়ত গুলোতে আরও প্রায় অর্ধকোটি টাকার কেনা বেচা হয়।’
বানেশ্বর বাজার এলাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই বাজার ঘিরে গত কয়েক বছরে অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক শাখা চালু করেছে। সাধারণত এই ব্যাংকগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা লেনদেন হয়। তবে আমের মৌসুম শুরু হলে লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া বাজার জুড়ে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা। সেখানও প্রতিদিন অনেক টাকা লেনদেন হয়।’