দেশের সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তায় বড় হুমকি ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালক এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন। মহাসড়কে গত পাঁচ মাসে হাইওয়ে পুলিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন ৫ হাজার ৩৬৯ জন চালক পেয়েছে। একই সময়ে মহাসড়কে শনাক্ত হয়েছে ফিটনেসবিহীন ২ হাজার ৮১টি যানবাহন। আটক হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার নিষিদ্ধ যান।
হাইওয়ে পুলিশ বলছে, লাইসেন্সবিহীন চালক ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এসব কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও হচ্ছে।
শুধু মহাসড়ক নয়, রাজধানী ঢাকার সড়কেও বাস চালাচ্ছেন লাইসেন্সবিহীন চালক। গত ১৯ এপ্রিল বিমানবন্দর সড়কে রাইদা পরিবহনের বাসের চাপায় সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশলী মইদুল ইসলাম সিদ্দিক নিহত হওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার বাসচালক হাসান মাহমুদ হিমেলেরও ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না।
বাসটির ফিটনেস সনদও দেখাতে পারেননি তিনি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘প্রতিটি দুর্ঘটনার কারণ থাকে। আমাদের দেশের দুর্ঘটনার কারণগুলো জানা। এ নিয়ে সরকারকে অনেক গবেষণা প্রতিবেদন ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছেই।’
হাইওয়ে পুলিশের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ ৯৮৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ৭৮৫ জন, নারী ১৭২ এবং শিশু ২৭ জন।
এসব দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন ৫২৩ জন।
গত ১৬ এপ্রিল ফরিদপুরে বাস ও মিনিট্রাকের সংঘর্ষে প্রাণ গেছে ১৫ জনের। বাসটির ফিটনেস সনদ ছিল না। ট্রাকে বহন করা হচ্ছিল যাত্রী। ওই ঘটনায় ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অতিরিক্ত গতি, বাসচালকের ঘুম ঘুম ভাব এবং বাসের সামনে ইজিবাইককে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে মহাসড়কে দুর্ঘটনার ১১টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, নিষেধাজ্ঞা না মেনে মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, অটোরিকশা ও তিন চাকার (থ্রি-হুইলার) যান চলাচল; বেপরোয়া গতি, গাড়ি চালানোর সময় মুঠোফোনে কথা বলা; মহাসড়কের পাশে বিকল্প সার্ভিস রোড ও স্বল্প দূরত্বে চলাচলের জন্য বিকল্প যানবাহন না থাকা; মহাসড়কের পাশে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা; মহাসড়কের পাশে অবৈধ হাটবাজার; অবৈধ পার্কিং; ফিটনেসবিহীন যান; মহাসড়কে ব্ল্যাক স্পট ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ইত্যাদি।
প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে হাইওয়ে পুলিশ ৯টি সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মহাসড়কে নিষিদ্ধ যান চলাচল বন্ধ করা, স্পিড ডিটেক্টরের মাধ্যমে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কের পাশের বৈধ ও অবৈধ হাটবাজার উচ্ছেদ, ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধ, ট্রাকে ও বাসের ছাদে যাত্রী পরিবহন বন্ধ, যত্রতত্র পার্কিং ও উল্টো পথে চলাচলের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর যথাযথ প্রয়োগ, নির্দিষ্ট দূরত্বের পর চালক/হেলপারদের বিরতি ও বিশ্রামের ব্যবস্থা, চালকের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, কম গতির যানবাহনের জন্য পর্যাপ্ত সার্ভিস লেন নির্মাণ এবং হাইওয়ে পুলিশের পর্যাপ্ত প্যাট্রলিং।
জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মহাসড়কে শৃঙ্খলা আনতে বেশ কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো সবাই মেনে চললে দুর্ঘটনা কমে আসবে।