হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। যার সংকেত H2 O2। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটি বর্ণহীন তরল। পানির সঙ্গে অতিরিক্ত একটি মৌল বেশি থাকে বলে একে হাইড্রোজেন পারক্সাইড বলা হয়। বাণিজ্যিক গ্রেড হাইড্রোজেন পারক্সাইড ঘনমাত্রা ৫০ শতাংশ এবং বাকিটা থাকে পানি। এটি রিয়েক্টিভ ও অক্সিডাইজিং কেমিক্যাল। এটা কোনো দাহ্য পদার্থ নয়; অর্থাৎ নিজে জ্বলে না। তবে বদ্ধ স্থানে ১৫০ ডিগ্রির ওপরে উত্তপ্ত করা হলে বাষ্পে পরিণত হয় ও তাপীয় বিয়োজনে হাইড্রোজেন পারক্সাইড বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করতে পারে। আগুন বা দাহ্য পদার্থের আশপাশে রাখলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
হাইড্রোজেন পারক্সাইডের ব্যবহার
হাইড্রোজেন পারক্সাইডের নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ব্যবহৃত হয়। ব্লিচিং এজেন্ট (পরিষ্কারক দ্রব্য) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ক্লিনিং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করতে এটি ব্যবহার করতে পারেন। কাপড়ে বা তুলায় হাইড্রোজেন-পারক্সাইড মিশ্রিত লাগিয়ে যন্ত্রপাতি মুছে ফেলতে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল পর্যায়ে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ব্লিচিংয়ে ব্যবহার করা হয়। এক লিটার পানিতে সর্বোচ্চ দুই এমএল ব্যবহার করতে হবে। ২০ ফোঁটায় এক এমএল হয়। বাথরুম পরিষ্কার, কাপড় ধোয়াসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যেও ব্যবহৃত হয় এটি। আগে বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন কারখানা রয়েছে, যেখানে হাইড্রোজেন পারক্সাইড উৎপাদন করা হয়।
যেসব অসুবিধা হতে পারে
অক্সিডাইজিং কেমিক্যাল হওয়ায় এটা সংরক্ষণ ও ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। এটি খোলা বা ভেন্টিলেটেড জায়গায় সংরক্ষণ করতে হয়। অন্যান্য রিডিউসিং কেমিক্যাল, ধাতু, ক্ষার ও দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এটা বেশ বিপজ্জনক। এর সংস্পর্শে কোনো দাহ্য পদার্থ থাকলে আগুন ধরার বা আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ১৫ শতাংশ ঘনমাত্রায় হাইড্রোজেন পারক্সাইড স্বাভাবিক থাকে। ৩০ শতাংশের ওপরে গেলে এটা অস্থিতিশীল হয়ে যায়। ঘনমাত্রা বেশি হলে এটা বিপজ্জনক অবস্থায় থাকে। বেশি ঘনমাত্রায় থাকা অবস্থায় শরীরে পড়লে পুড়ে যেতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে হাইড্রোজেন পারক্সাইড শরীরে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা, নাক জ্বলা বা বমিও হতে পারে। চোখ বা ত্বকের সংস্পর্শে এলে তাড়াতাড়ি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অতিরিক্ত হাইড্রোজেন পারক্সাইড ফুসফুসেও সমস্যা তৈরি করতে পারে।
প্রথমে এর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। ব্যবহারের সময় যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। খালি হাতে ব্যবহার করা যাবে না। পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ব্যবহার করতে হবে। হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি শীতল, শুষ্ক, ভালো বায়ু চলাচল এলাকায় এবং কোনো দাহ্য বা দাহ্য পদার্থ থেকে দূরে সংরক্ষণ করা উচিত। কেমিক্যালের সেফটি ডেটাশিটে সাবধানতা সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে। আগুন নেভাতে অবশ্যই পানি ব্যবহার করতে হবে। অন্য কোনো কেমিক্যাল ফায়ার ফাইটিংয়ে ব্যবহার করা যাবে না। দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এলে অবশ্যই বেশি পরিমাণ পানি দিয়ে ধুয়ে দ্রুত হাইড্রোজেন পারক্সাইডমুক্ত করে ফেলতে হবে, যাতে অগ্নিকাণ্ড না ঘটতে পারে।
অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম