ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ঘাট থেকে বরগুনার বেতাগী উপজেলার বন্দর নৌরুটে খেয়া পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা অভিযোগ উঠেছে। ভাড়ার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। ঘাটে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার ভাড়া আদায় করার কথা থাকলেও স্থানীয় এক ব্যক্তি দিয়ে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
কাঠালিয়া উপজেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, শৌলজালিয়া টু বেতাগী বন্দর নৌরুটের সর্বশেষ বাংলা ১৪২৭ সনে (২০২০) ইজারা হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর গুরুত্বপূর্ণ নৌপথটি ইজারা হচ্ছে না। তাই ইজারাবিহীন এ নৌপথে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাস কালেকশন করা হচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাঠালিয়া ও বেতাগী উপজেলার ব্যস্ততম শৌলজালিয়া থেকে বেতাগী বন্দর নৌপথ দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ইঞ্জিনচালিত ট্রলার দিয়ে নদী পারাপার করে। আর এ সময় যাত্রীর কাছ থেকে ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। যেকোনো উৎসবে এ ভাড়া আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রেও গলাকাটা পরিবহন ভাড়া আদায় করা হয়। আর পারাপার ও মালামাল পরিবহনে যাত্রীদের কাছ থেকে খাস কালেকশনের এ টাকা মো. নাসিম নামে এক ব্যক্তি শৌলজালিয়া ঘাটে বসে আদায় করছেন। প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খাস কালেকশনের টাকা আদায় করা হলেও তারা অল্প কিছু সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে থাকে। অন্যদিকে খাস কালেকশন আদায় করার সময় কোনো দিনই শৌলজালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শৌলজালিয়া খেয়াঘাটে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি।
বাংলা ১৪২৯ সনে শৌলজালিয়া থেকে বেতাগী খেয়াঘাটের ইজারা নিতে চাওয়া মো. ইমরান হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, আমি এবার এই ঘাটের ইজারা নেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করে বরিশালে জমা দিই। কিন্তু শৌলজালিয়ার সিন্ডিকেট চক্র আমাকে শিডিউল ফেলতে দেয়নি। তারা চায় যেন ঘাটের ডাক না হয়।
শৌলজালিয়া খেয়াঘাটে খাস কালেকশনের টাকা উত্তোলনকারী নাসিম বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে তিনি টাকা উত্তোলনের জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রতিদিন কত টাকা খাস কালেকশন হয় জানতে চাইলে তিনি কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি হননি।
শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহমুদ হোসেন রিপন বলেন, যারা ইজারাদার, তারা ইজারা নিয়ে লাভবান হয় না। তাই দীর্ঘদিন ধরে এ ঘাট ইজারা হয় না। যখন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়ার অভিযোগ পাই, তখন আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা করি।
লজালিয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) মো. জাকির বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার কাকে দিয়ে খাস কালেকশন করান তা আমি জানি না। আমি কখনো ঘাটে যাইনি।
কাঠালিয়া উপজেলা ইউএনও সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, কেউ ইজারার শিডিউল কিনে না বিধায় বাধ্য হয়ে আমাকে খাস কালেকশনের মাধ্যমে টাকা তুলতে হয়। খাস কালেকশনের টাকা তুলতে আমি স্থানীয় মেম্বারকে দায়িত্ব দিয়েছি। শৌলজালিয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা দুটা ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকায় তিনি ঘাটে যেতে পারেন না।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, কাঠালিয়া প্রশাসন খেয়াঘাটের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করে না।