ড. মো. হাদিউজ্জামান, অধ্যাপক, বুয়েট
এই করিডরে এই প্রকল্প নির্মাণ করাটাই মস্ত বড় ভুল। কারণ, এটা একটা ক্যাপটিভ (বন্দী) করিডর। ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর—এই জেলাগুলোতে ভবিষ্যতে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হবে। এই করিডরে দুই পাশে অনেক শিল্পকারখানা। এখানে ভারী যানবাহন চলাচল অনেক বেশি। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার প্রধান গেটওয়েও এটি।
এটা একটা জাতীয় মহাসড়ক। আরবান ট্রান্সপোর্টকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে জাতীয় মহাসড়কের ভবিষ্যৎকে সংকুচিত করলাম। ভবিষ্যতে এই মহাসড়ক প্রসারিত করতে চাইলে সেই সুযোগটা আর থাকবে না।
আমি বলব, প্রকল্প পরিকল্পনায় ত্রুটি আছে। এই পরিকল্পনা আরও সুদূরপ্রসারী হওয়া উচিত ছিল। একটা জাতীয় মহাসড়কের অর্ধেকের বেশি দেওয়া হচ্ছে ঢাকা-গাজীপুর যাতায়াতের জন্য। যদি জ্যামিতিকভাবে ধরা হয়, তাহলে কাকে কতটুকু দেব, সেই জায়গাটায় মস্ত বড় ভুল। এখানে গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল দূরপাল্লার যানবাহনের। তাই পরিকল্পনা ও নকশা দুটোতেই ত্রুটি আছে।
এরপরও যদি এই প্রকল্পের প্রকৌশলগত দিক থেকে বিবেচনা করি তাহলে দেখা যাবে, ছোট অনেকগুলো ফ্লাইওভার করা হয়েছে; উঠালাম আর নামালাম। অনেকটা রোলার কোস্টারের মতো। এটা দিয়ে ২০ কিলোমিটারের অর্ধেক চলে আসছিলাম। বাকি অর্ধেক যদি শুধু ফ্লাইওভার করতাম তাহলে নিচের সড়ক অনেকটা ফাঁকা থাকত।
বাংলাদেশ ছোট দেশ, অনেক ঘনবসতিপূর্ণ। তাই করিডরের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। চাইলেই এলিভেটেড করে দিতে পারতাম। জাতীয় মহাসড়কে যেখানে দূরপাল্লার যাত্রাকে গুরুতে দিতে হবে, সেখানে ঢাকা-গাজীপুরকে গুরুত্ব দিলাম। এর চেয়ে ঢাকা-জয়দেবপুর আলাদা লাইন করে দুটো কমিউটার ট্রেন চালাতাম, সেটা বেশি উপকার দিত। রেলের সেই জায়গা আছে। এখন যে ভুল হয়েছে এটা কখনোই ফেরানো যাবে না।
এখানে ঠিকাদার নিয়েও প্রশ্ন আছে। অভিযোগ আছে, তাদের আর্থিক সামর্থ্য ছিল না। এটা বিদেশি অর্থায়নে, তাই এখানে একটা সময় থাকে। এরপর তো সুদ দিতে হবে। এটাও ঠিক, এই করিডরে কাজ করা খুব চ্যালেঞ্জিং।