সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সৃষ্ট উড়ন্ত কালিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। কালির আস্তরণ জমে মরিচা পড়ছে আশপাশের বাড়ির টিনে, বিরূপ প্রভাব পড়ছে ফসলের খেতে। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে তিন গ্রামের প্রায় হাজার মানুষ।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, কালির এই সমস্যার সমাধান দাবি করে স্থানীয় ৮০০-৯০০ জন একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছিলেন। তাঁরা সমাধানের আশ্বাস দিলেও পরে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্থানীয় সূত্র বলেছে, জেলার সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কুমিল্লাহাড়ি এলাকায় কয়েক বছর আগে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার ভেঞ্চার লিমিটেডের ইপিভি ঠাকুরগাঁও লিমিটেড নামের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এটি উৎপাদনে আসে। ১১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ কেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় ফার্নেস অয়েল। কেন্দ্রটির উঁচু চুল্লি দিয়ে ধোঁয়ার সঙ্গে নির্গত হচ্ছে ঘন কালি। এটি ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায়। গাছের পাতা, ঘরের চাল, উঠানে শুকাতে দেওয়া কাপড়, এমনকি গবাদিপশুর গায়েও কালির আস্তরণ পড়ছে। স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদ ও মাঠ কালিতে ছেয়ে আছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ৫০০ মিটার পশ্চিমে অবস্থান দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এখানকার প্রধান শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত কালি বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্যালয়ের ছাদ, মাঠসহ আশপাশের এলাকায়। এর প্রভাবে আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছি।’
বলাকা উদ্যান-সংলগ্ন একটি পুকুরে মাছ চাষ করেন স্থানীয় মো. আলম। তিনি বলেন, ‘পুকুরে মাছ চাষ করে সংসার চলে আমার। পানিতে কালি পড়ায় অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। মাছ মরে যাচ্ছে, উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, টিনশেডের বাড়িগুলোয় কালি পড়ে মরিচা ধরে চাল ফুটো হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া খাদ্যশস্যের ফলনও কমে গেছে।
বাতাসে ছড়িয়ে পড়া এসব কালির কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে বলে জানান ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন নুর নেওয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, উড়ন্ত কালিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে। ত্বকের সমস্যা হবে। ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে যাবে। এসবের প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদি।
স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার ভেঞ্চারের (ইপিভি) প্রধান নির্বাহী মাহবুব কবির বলেন, ‘এটা গ্রামবাসীদেরই বিদ্যুৎকেন্দ্র। সবাই যেন সুস্থ থাকে, তা আমরা চাই। আগে অনেক শব্দ হতো, তা সমাধান করেছি। আমরা সব সময় সমাধানের পক্ষে।’
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির এ ধরনের জনভোগান্তি নিরসনে স্থানীয় প্রশাসন কী উদ্যোগ নিচ্ছে, জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের কালির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।