মৌলভীবাজারের জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার একাংশজুড়ে অবস্থিত পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্ট। সিলেট বিভাগের মধ্যে এই বনটি এখনো বেশ সমৃদ্ধ। তবে বর্তমানে মানুষের বসতি বাড়ায় বনের আয়তন দিন দিন কমছে। সেই সঙ্গে কৃত্রিম বনায়নের কারণে আবাসস্থল নিয়ে সংকটে পড়ছে বন্য প্রাণীরা।
বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে পড়া পাথারিয়া বনকে ১৯২০ সালে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়। যেখানে ১৯৬৭ সালে পাথারিয়া পাহাড়ের আয়তন ছিল ১ হাজার ১৫২ বর্গকিলোমিটার, বর্তমানে সম্মিলিত আয়তন মাত্র ১৩৫ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৮৮ এবং বাকি ৪৭ বর্গকিলোমিটার পড়েছে ভারতে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগ এবং বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের নিবিড় পর্যবেক্ষণে সম্প্রতি এই বনে প্রায় ৩৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। মাঝারি মাংসাশী প্রাণীদের মধ্যে সোনালি বিড়াল ও মেছোবিড়ালের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। তবে চিতাবাঘ অথবা মেঘলা চিতার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ ২০০৭ সালে বনের সুরমা বাঁশমহাল এলাকায় চিতাবাঘের আক্রমণে একটি গরু মারা যায়। পরে মৃত গরুর শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হলে সেই শিকারি বাঘটি মাংস খেতে এসে মারা পড়ে।
পরিবেশকর্মীরা জানান, বনের মূল ভূখণ্ডকে কেন্দ্র করে বন বিভাগ কৃত্রিম বনায়ন করেছে। এ কারণে প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। বনায়নের কারণে বিভিন্ন ফলদ গাছ কাটা পড়েছে। ফলশূন্য আকাশমণি গাছ দিয়ে বনায়ন করায় বন্য প্রাণীর জীবনযাপন করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাকৃতিক বনাঞ্চল যতটুকু এখনো টিকে আছে, সঠিকভাবে তা সংরক্ষণের আওতায় আসলে এসব প্রাণীকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।
পরিবেশকর্মী খোর্শেদ আলম বলেন, এখন কৃত্রিম বনায়ন হয়েছে, যা প্রাণীর জন্য মোটেও উপযোগী নয়। অন্যদিকে অবৈধভাবে ব্যাপক হারে বাড়ছে পান চাষ। মানুষের নিয়মিত সমাগমের কারণে বন্য প্রাণীরা এখন বনে নিরাপদে থাকতে পারছে না।
স্থানীয় দ্বহপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুর রহমান জানান, বনে খাবার না পেয়ে বানর লোকালয়ে আসছে। ফলমূল ও সবজির ওপর হানা দিচ্ছে। বানর যা খায় তার চেয়ে বেশি খাবার নষ্ট করে। অনেক মানুষ এখন বানরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে চাষাবাদ ছেড়ে দিয়েছে।
জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্য প্রাণী গবেষক এম এ আজিজ বলেন, ‘পাথারিয়া পাহাড়ে মানুষের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। একে ছেড়ে দিতে হবে প্রকৃতির ওপর। এতে যে পাথারিয়া ধীরে ধীরে বিরল বন্য প্রাণীর শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে উঠবে, এটি নিশ্চিত করে বলা যায়। অতীতে কতটুকু কী হয়েছে, সেদিকে আমাদের তাকিয়ে আর লাভ নেই। আমাদের এখন নতুন করে ভাবতে হবে। আজও এ বনে প্রাণ-প্রকৃতির যেটুকু টিকে আছে, তাও আমাদের কাছে প্রায় অজানা। এ আমাদের বড় দৈন্য। এ জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিচারালয়ে দাঁড়াতে হবে।’
এ নিয়ে কথা হলে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের (সদর দপ্তর মৌলভীবাজার) ওয়াইল্ডলাইফ রেঞ্জার গোলাম ছারওয়ার বলেন, ‘বানরের প্রজনন বেড়ে যাওয়ায় তারা লোকালয়ে আসছে বলে আমরা মনে করি। কৃত্রিম বনায়ন বা সরকারি প্রকল্প এর জন্য দায়ী নয়।’